চাঁদপুরে চলতি বছরের ২০২৩-২৪ এর জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি এ দুমাসে ৩ লাখ ৬৫ হাজার প্রবাসী থেকে ১৭৪ কোটি ২৮ লাখ টাকার বৈদেশিক রেমিট্যান্স অর্জন করেছে ব্যাংকগুলো। সংশ্লিষ্ট চাঁদপুরের ৫ রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংকের আঞ্চলিক অফিস থেকে ২৮ মার্চ প্রাপ্ত তথ্য মতে, সোনালী ব্যাংকের ২০টি শাখায় ৬ কোটি ৭৮ লাখ টাকার বৈদেশিক রেমিট্যান্স, জনতা ব্যাংকের ১৭ টি শাখায় ৮৭ কোটি টাকার বৈদেশিক রেমিট্যান্স, অগ্রণী ব্যাংকের ২১টি শাখায় ৫০ কোটি ২০ লাখ টাকা, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ২৮টি শাখায় ২৮ কোটি টাকা, রূপালী ব্যাংকের ১৩ টি শাখায় ২ কোটি ৩০ লাখ টাকার রেমিট্যান্স অর্জন করে।
এ সব টাকা কর্মজীবী প্রবাসীগণ মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশে^র বিভিন্ন দেশ থেকে স্ব স্ব ব্যাংক হিসেবের মাধ্যমে প্রেরণ করেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন এজেন্সি গুলো এসব প্রেরণ করার পর বাংলদেশ ব্যাংক মাধ্যমে স্ব স্ব জেলার ঔ সব ব্যাংকের শাখায় প্রেরণ করে। বর্তমানে প্রতিটি ব্যাংকে বৈধভাবে ব্যাংকের মাধ্যমে দেয় ২.৫০% এবং সরকার দেয় ২.৫০ % মোট ৫% প্রণাদনা। সংশ্লিষ্ঠ ব্যাংক ব্যতীত অন্যকোনো ভাবে টাকা প্রেরণ করণে এ প্রণোদনা গ্রাহক পাচ্ছে না।
প্রসঙ্গত, চাঁদপুরের প্রবাসীদের শ্রমের বিনিময়ে পাঠানো রেমিটেন্স জেলার প্রায় দু’শতাধিক ব্যাংক শাখা ও কয়েক শ’শপিংমলে অর্থের তারল্য সৃষ্টি করছে। জেলায় প্রবাসীদের নিজ নিজ বাড়ি বা ভবন, ব্যবসা-বাণিজ্যে, শিক্ষা, কৃষি, স্ব-স্ব এলাকায় অবকাঠামোর উন্নয়ন, মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানার অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন ক্ষেত্রে চিত্র পাল্টে দিয়েছে প্রবাসীদের বৈদেশিক র্যামিটেন্স।
সম্প্রতি চাঁদপুর জনশক্তি ও কর্মসংস্থান ব্যুরোর ২০১৯ সালের এক প্রতিবেদনে তথ্যে জানা গেছে -পৃথিবীর ১৬২টি দেশে ১ কোটি ২০ লাখ বাংলাদেশি প্রবাসী রয়েছে। প্রবাসীর বেলায় দেশের অন্যান্য জেলার মধ্যে চাঁদপুরের অবস্থান ৬ষ্ঠ। চাঁদপুরের জনশক্তি ও কর্মসংস্থান কার্যালয় সূত্র মতে,মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের পরিসংখ্যান মতে- চাঁদপুরের বৈধ প্রবাসী ৩ লাখ ৬৫ হাজার শ্রমজীবী। তারা নিজ নিজ কর্মস্থল থেকে তাদের নিকটতম স্বজনদের কাছে ব্যাংক ও অন্যান্য এজেন্সির মাধ্যমে ঔ র্যামিটেন্স প্রেরণ করেন। অবৈধ বা বিকাশ বা অন্যান্যভাবে রয়েছে আরো অসংখ্য র্যামিটেন্স অর্জন যার কোনো পরিসংখ্যান জানা সম্ভব হয়নি।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রম বাজার সৌদি আরব। এর পরের স্থান হলো কুয়েত,কাতার,বাহরাইন, লেবানন, জর্ডান ও লিবিয়া। নদীমাতৃক চাঁদপুরের জন্য এটি একটি বিশাল প্রাপ্তি মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে চাঁদপুরের প্রবাসীদের বেশিরভাগই মধ্যপ্রাচ্য তথা আরব দেশগুলোতে শ্রম ব্যয় করছেন। মালয়েশিয়া, ইতালি, ফ্রান্স, সিংগাপুর, জাপান,দক্ষিণ কোরিয়াসহ অনেক বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চাঁদপুরের প্রবাসী কর্মজীবী রয়েছে। তাঁরাই এসব রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। চাঁদপুরের প্রবাসীরা প্রতি মাসে বিভিন্ন অর্থলগ্নী আন্তর্জাতিক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদিত এজেন্সির মাধ্যমে এসব র্যামিটেন্স প্রেরণ করে থাকে। কোনো কোনো ব্যাংক কেবলমাত্র গোপন একটি পিন নাম্বারের মাধ্যমে অর্থ লেনদেন করছেন। অনেক প্রবাসী গ্রাহক তাদের ব্যক্তিগত হিসাবেও অর্থ প্রেরণ করেন।
চাঁদপুরের উত্তরা,ফার্মাস,মার্কেন্টাইল, প্রাইম,ডাচ-বাংলা,সিটি,ন্যাশানাল,ইউনাইটেড কমার্শিয়াল,ট্রাস্ট প্রভৃতি ব্যাংকগুলো প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থ লেনদেন করলেও চাঁদপুরে এসব ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণকারী বিভাগীয় অফিস কুমিল্লা থাকায় এবং বিকাশ লেন-দেন তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় এ প্রতিবেদনে তা’ উল্লেখ করা সম্ভব হয়নি বলে এ প্রতিবেদনে ঔ তথ্য যুক্ত হয়নি। প্রবাসীদের পাঠানো বৈদেশিক রেমিট্যান্স দেশের রিজার্ভ বাড়ছে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও আর্থ-সামাজিক অবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে। কোনো কোনো ব্যাংকের প্রতিটি বৈদেশিক রেমিট্যান্স ডেস্ক ও হেলপ ডেস্ক আলাদাভাবে সেবা প্রদানের জন্যে খোলা হয়েছে। ব্যাংক শাখা এ ক্ষেত্রে সব্বোর্চ সেবা প্রদানে বদ্ধপরিকর।প্রবাসীরা টাকা প্রেরণের কয়েক মিনিটের মধ্যেই ব্যাংক তার গ্রাহককে কাংখিত অংকের টাকা প্রদান করতে সক্ষম।
বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদিত বিভিন্ন অর্থলগ্নি এজেন্সির মাধ্যমে বাংলাদেশি প্রবাসীরা তাদের নিজ নিজ কর্মস্থল থেকে ওই অর্থ প্রেরণ করেন।এ সব টাকা কর্মজীবী প্রবাসীগণ মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশে^র বিভিন্ন দেশ থেকে স্ব স্ব ব্যাংক হিসেবের মাধ্যমে প্রেরণ করেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন এজেন্সি গুলো এসব প্রেরণ করার পর বাংলদেশ ব্যাংক মাধ্যমে স্ব স্ব জেলার ঔ সব ব্যাংকের শাখায় প্রেরণ করে। বর্তমানে প্রতিটি ব্যাংকে বৈধভাবে ব্যাংকের মাধ্যমে দেয় ২.৫০% এবং সরকার দেয় ২.৫০ % মোট ৫% প্রণাদনা। সংশ্লিষ্ঠ ব্যাংক ব্যতীত অন্যকোনো ভাবে টাকা প্রেরণ করণে এ প্রণোদনা গ্রাহক পাচ্ছে না।
চাঁদপুরে রূপালী ব্যাংকের সিনিয়র কর্মকর্তা চাঁদপুরের রেমিটেন্স অর্জন সম্পর্কে বলেন,‘ আমাদের দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের চাবিকাঠি হলো রেমিটেন্স। এতে ব্যাংকের রিজার্ভ বাড়ছে। মানুষের আর্থিক সচ্ছলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি দৈনন্দিন জীবনে বৈদেশিক রেমিটেন্স একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। চাঁদপুরসহ দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে রেমিটেন্টেসর ভূমিকা অপরিহার্য। ‘বিশেষ করে চাঁদপুরের গ্রামে-গঞ্জে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের কারণে প্রতিটি বাড়িতে দৃষ্টিনন্দন ভবন দেখা যাচ্ছে। রূপালী ব্যাংক তাদের সার্বিক লেনদেনের জন্য যথেষ্ট আন্তরিকতার সহিত কাজ করে থাকে।’
আবদুল গনি
এপ্রিল ২, ২০২৪
এজি