নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার জন্য সারা দেশে ‘বিশেষ টাস্কফোর্স’ এর কার্যক্রম চলমান রাখাসহ ৯টি সুপারিশ জানিয়েছে ভোক্তার অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অসাধু ও মুনাফা শিকারি ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অস্বাভাবিক বাড়ার প্রতিবাদে আয়োজিত এক মানববন্ধনে ক্যাবের নেতারা এসব সুপারিশ জানান।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, বর্তমানে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্যের দাম বেড়েছে যা জনজীবনে চাপ সৃষ্টি করছে। বর্তমানে ঢাকার খুচরা বাজারে অধিকাংশ সবজির কেজি ১০০ টাকার ওপরে। কাঁচামরিচের দাম দেশের ইতিহাসে সর্বকালের সব রেকর্ড ভেঙে প্রতি কেজি ৬০০ টাকায় উঠেছিল। লাল ডিমের দাম প্রতি ডজন ১৭০-১৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, যা দুই মাস আগেও ছিল ১৫০ থেকে ১৬২ টাকা। কিন্তু একজন সাধারণ ক্রেতা এই উচ্চ মূল্যের বাজারের সঙ্গে কীভাবে চলবে, সেই বিষয়ে পদক্ষেপ নিচ্ছে না সরকার।
এসময় সিপিবি’র সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, সরকারের লক্ষ্য থাকা উচিত জনগণকে স্বস্তি দেওয়া। কিন্তু আমাদের দেশে এখন সেই স্বস্তি নেই। অস্বস্তির কারণেই কিছু দিন আগে সরকারের (আওয়ামী লীগ) পতন হয়েছে। কিন্তু বর্তমান সরকারও সেই অস্বস্তি দূর করতে পারছে না। এর কারণ হচ্ছে সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে পরিবর্তন হয়েছে সিন্ডিকেটের হাত। অবিলম্বে বাজার মূল্য নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে জনগণের স্বস্তি নিশ্চিত করতে হবে এবং সিন্ডিকেট চিহ্নিত করে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
সাধারণ নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন আহমেদ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে বলেন, আপনি সংস্কারের চিন্তা বাদ দিন। বাজার মূল্য এবং সড়কের শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের দিকে নজর দিন।
ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির ভূইয়া বলেন, আমাদের একটাই দাবি, নিত্যপণ্যের মূল্য ভোক্তার নাগালের মধ্যে আনুন।
ক্যাবের ৯ সুপারিশ হল :
১. নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার জন্য সারা দেশে ‘বিশেষ টাস্কফোর্স’ এর কার্যক্রম চলমান রাখতে হবে।
২. পাইকারি ও খুচরা বাজারে সব পণ্যের বিক্রয়মূল্য দৃশ্যমান স্থানে প্রদর্শন করতে হবে। এজন্য জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরকে সারা দেশে জোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
৩. নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের উৎপাদন, চাহিদা ও সরবরাহের তথ্য সংগ্রহ, সরবরাহ ও প্রাপ্তি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে নিশ্চিত করতে হবে।
৪. নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি মূল্য, পাইকারি মূল্য ও খুচরা মূল্য নির্ধারণ করতে হবে ও তা বাস্তবায়নের কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
৫. কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি, মজুদকারী ও মুনাফা শিকারিদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স দেখাতে হবে এবং তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
৬. পেঁয়াজ, রসুন ও আদার অধিকতর চাষাবাদের জন্য বীজ, সার ও লাগসই আধুনিক প্রযুক্তি কৃষকদের নিকট সহজলভ্য করতে হবে।
৭. প্রাণিজ পুষ্টির চাহিদা পূরণে ক্ষুদ্র পোল্ট্রি খামারিদের আর্থিক প্রণোদনা দিতে হবে।
৮. পেঁয়াজ, রসুন, আদা, সয়াবিন তেল, চিনিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের শুল্ক ছাড় দিয়ে পণ্য আমদানির জন্য এলসি খোলার সুযোগ দিতে হবে এবং পণ্য আমদানির পর তা যেন নির্দিষ্ট দামে বাজারে বিক্রি হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।
৯. সড়কে চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন হয়রানি বন্ধ করার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
সাপ্তাহিক হাজীগঞ্জ রিপোর্ট
১৭ অক্টোবর ২০২৪
এজি