বাঙালির সবচেয়ে আবেগ-ভালোবাসার বইমেলা শেষ হলো। এক মাসের বেশি সময় চলার পর শনিবার মেলার আনুষ্ঠানিক পরিসমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। এবার মেলা গড়িয়েছিল ৩১ দিনে। প্রতিদিনই এসেছে নতুন বই। বাংলা একাডেমির তথ্য অনুযায়ী, এবারের মেলায় নতুন বইয়ের সংখ্যা ৩৭৫১। এসব বইয়ের মধ্যে উপন্যাস, ছোট গল্প যেমন ছিল, তেমনি ছিল কবিতা। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধসহ ইতিহাস, রাজনীতি, শিক্ষা, সংস্কৃতির নানা দিক নিয়ে বই লেখা হয়েছে।
আর বহু যুগ বা কাল আগে প্রকাশিত যেসব বই বাংলা সাহিত্যকে বিপুলভাবে সমৃদ্ধ করেছে, যেসব বইয়ের আবেদন কোনোদিন ফুরোবার নয় সেসব বই তো ছিলই। আর ছিল আবেগে লেখা ভুলভাল বই। মেলায় লেখক ছিল। অলেখকও ছিল। প্রকাশক ছিল। অপ্রকাশকও ছিল। পাঠক ছিল। অপাঠকও ছিল।
ফলে অমর একুশে বইমেলার প্রকৃত বৈশিষ্ট্য ও ভাবগাম্ভীর্য মার খেয়েছে। মেলার নামে একটা লোক দেখানো পেট মোটা বিশৃঙ্খল হাট চালু করা হয়েছিল বলেও অনেকে অভিযোগ করেছেন। তার পরও অমর একুশে বইমেলার সমাপনী দিনে অনেকেরই মন খারাপ ছিল। বিষন্ন ছিল।
শেষদিন মেলা শুরু হয় সকাল ১১ টায়। এদিন আগেভাগেই বইপ্রেমী মানুষ মেলায় আসতে শুরু করেন। বেলা যত গড়িয়েছে পাঠকের সমাগম তত বেড়েছে। সমাগমটিকে ‘পাঠকের’ বলার কারণÑ এদিন মেলায় আগতরা বই কেনায় বেশি মনোযোগী ছিলেন। পাশাপাশি লেখক, পাঠক, প্রকাশকদের যারা প্রতিদিনই মেলায় আসতেন তারা পরস্পরের কাছ থেকে বিদায় নিয়েছেন।
সমাপনি অনুষ্ঠান
মেলার শেষদিন বাংলা একাডেমির মূলমঞ্চে সমাপনি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ হয়ে এসেছিলেন সদ্য দায়িত্ব নেয়া সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজাহার খান।
অনুষ্ঠানে তিনি বলেন,‘ উদ্বোধনী দিন মেলায় এসেছিলাম। তখনো ভাবিনি এক মাসের মধ্যে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী হয়ে এখানে আসব।’
মেলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ শুনেছি আগামীতে মেলা অন্য কোথাও সরিয়ে নেয়া হতে পারে। তবে এ জায়গাটা যেহেতু গেরিটেজ,আমি আপ্রাণ চেষ্টা করব এখানেই বইমেলা করার।
অনুষ্ঠান থেকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রকাশকদের হাতে ক্রেস্ট ও সম্মাননাপত্র তুলে দেয়া হয়। ২০২৩ সালে প্রকাশিত বিষয় ও গুণমানসম্মত সর্বাধিক সংখ্যক বই প্রকাশের জন্য প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান কথাপ্রকাশ পেয়েছে চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার ২০২৪। গুণমান ও শৈল্পিক বিচারে সেরা বই মনজুর আহমদ রচিত‘একুশ শতকে বাংলাদেশ: শিক্ষার রূপান্তর’ এর জন্য পুরস্কার পেয়েছে প্রথমা প্রকাশন।
মঈন আহমেদ রচিত ‘যাত্রাতিহাস: বাংলার যাত্রাশিল্পের আদিঅন্ত’ এর জন্য ঐতিহ্য এবং আলমগীর সাত্তার রচিত ‘কিলো ফ্লাইট’ এর জন্য জার্নিম্যান বুকসকে মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার দেওয়া হয়। ২০২৩ সালে গুণমান বিচারে সর্বাধিক সংখ্যক শিশুতোষ বই প্রকাশের জন্য প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ময়ূরপঙ্খী পেয়েছে রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার।
তৃতীয়বারের মতো একই পুরস্কার পেয়ে রীতিমতো রেকর্ড গড়েছে ময়ূরপঙ্খী। প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার মিতিয়া ওসমান পুরস্কার গ্রহণ করেন। এবারের বইমেলায় নান্দনিক অঙ্গসজ্জায় সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বেঙ্গল বুকস, নিমফিয়া পাবলিকেশন ও অন্যপ্রকাশকে কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০২৪ প্রদান করা হয়।
এর আগে পহলো ফেব্রুয়ারি বইমলো শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলা একাডেমিতে উপস্থিত হয়ে বইমেলার উদ্বোধন করনে। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৬৩৫টি প্রতিষ্ঠানকে স্টল ও প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রথম দিন থেকেই মেলায় লোকসমাগম ভালো ছিল।
মেট্রোরেল যুগে প্রবেশের পর এটি ছিল প্রথম মেলা। ফলে বিশেষ এ যাতায়াত সুবিধা কাজে লাগিয়েছেন সব বয়সী মানুষ। অন্যান্য বছর দেখা গেছে উত্তরা বা মিরপুরের দিক থেকে পাঠক কম আসেন। এবার তারাই এসেছিলেন অধিক সংখ্যায়।
৩ মার্চ ২০২৪
এজি