Tuesday , 11 March 2025
প্রবাসী--

২০২৩ সালে জনশক্তি রপ্তানিতে বাংলাদেশের রেকর্ড

২০২৩ সালে আগের তুলনায় ১৫% বেশি বিদেশে জনশক্তি রপ্তানি করে রেকর্ড করেছে বাংলাদেশ। সৌদি আরবে বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগে কোটা বাড়ানো এবং মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার আবার খুলে দেয়ার কারণে জনশক্তি রপ্তানির এ রেকর্ড সম্ভব হয়েছে ।

জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্যমতে, গত বছর বিশ্বের ১৩৭টি দেশে বাংলাদেশের ১৩ লাখ কর্মীর কর্মসংস্থান হয়েছে। আগের বছর এ সংখ্যা ছিল ১১ লাখ ৩৫ হাজার।

তবে জনশক্তি রপ্তানিতে মাইলফলক অর্জন সত্ত্বেও এর সাথে তাল মিলিয়ে বাড়েনি রেমিট্যান্স প্রবাহ। ২০২৩ সালে রেমিট্যান্স প্রবাহ ৩ % বেড়ে হয়েছে ২১.৯২ বিলিয়ন ডলার। আগের বছর যা ছিল ২১.২৯ বিলিয়ন ডলার। সে হিসেবে গত দু’ বছর ধরে রেমিট্যান্স প্রবাহ ২২ বিলিয়ন ডলারের নিচেই স্থবির হয়ে আছে।

চার বছর বন্ধ থাকার পর বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য মালয়েশিয়া তার শ্রমবাজার খুলে দেয়। বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি রপ্তানিতে সৌদি আরবের পরই এখন মালয়েশিয়ার অবস্থান।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এ দেশটি ম্যানুফাকচারিং,নির্মাণ,পরিষেবা, প্ল্যান্টেশন,কৃষি,খনি এবং এমনকি গৃহস্থালি পরিষেবার মতো বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশের ৩.৫১ লাখ কর্মী নিয়োগ দিয়েছে।

একইসাথে সৌদি আরবের সব ফার্মে বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য কোটা ২৫ % থেকে বাড়িয়ে ৪০% করা হয়েছে। এ কারণে গত দু বছরে জনশক্তি রপ্তানির প্রবৃদ্ধিতে এ দেশের সামগ্রিক অবদান উল্লেখযোগ্য।

সৌদি আরব গত বছর বিভিন্ন খাতে বিশেষ করে নির্মাণশ্রমিক,পরিচ্ছন্নতাকর্মী,রাজমিস্ত্রি, প্লাম্বার ও ড্রাইভারসহ বিভিন্ন খাতে সর্বোচ্চ সংখ্যক ৪.৯৮ লাখ কর্মী নিয়োগ দিয়েছে যা বাংলাদেশের মোট বৈদেশিক কর্মসংস্থানের ৩৮ %।

শ্রম নিয়োগকারীরা বলছেন, কোভিড-১৯ মহামারির কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে অভিবাসন থমকে গিয়েছিল। সে সময় যেসব কর্মী বিদেশে যেতে পারেননি,তারা পরবর্তী বছরগুলোতে বিদেশে পাড়ি জমানোর সুযোগটি কাজে লাগিয়েছেন।

যদিও এসব ভাল খবরের সাথে কিছু মন্দ খবরও রয়েছে। বহু কর্মী বিশেষ করে ওমান, সৌদি আরব ও মালয়েশিয়ায় ভুয়া বা জাল চাকরির প্রলোভনে প্রতারণার শিকার হয়ে কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন।

যেমন- মালয়েশিয়া যেতে অনেক কর্মী সাড়ে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা খরচ করেছেন। যেখানে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় নির্ধারিত এ অর্থের পরিমাণ মাত্র ৭৯ হাজার টাকা।

গত বছর রেকর্ডসংখ্যক জনশক্তি রপ্তানির আরেকটি কারণ হলো মধ্যপ্রাচ্যের গন্তব্যের পাশাপাশি ইতালি ও যুক্তরাজ্যের মতো অপ্রচলিত বাজারগুলোতেও জনশক্তি রপ্তানি করা।

গত বছর কৃষি, আতিথেয়তা ও ম্যানুফাকচারিংয়ের মতো খাতে ১৬ হাজার ৯২৬ জন বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ দিয়েছে ইতালি। যুক্তরাজ্যেও পরিচর্যাকারী, গৃহকর্মী ও আতিথেয়তার মতো খাতে বাংলাদেশের ১০ হাজার ৪৩৭ জন কর্মী নিয়োগ পেয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় নিয়োগ পেয়েছে প্রায় ৫ হাজার বাংলাদেশি। সিঙ্গাপুরে নিয়োগ পেয়েছে ৫৩ হাজার বাংলাদেশি।

অপ্রচলিত কিছু গন্তব্যের কারণে গত বছরের ১১ ডিসেম্বরের পর্যন্ত দক্ষ কর্মী অভিবাসন ২২ শতাংশ বেড়েছে। গত বছর বিদেশে কর্মসংস্থান হওয়া দক্ষ বাংলাদেশি কর্মীর সংখ্যা ৩.০৮ লাখ। ২০২২ সালে এটি ছিল ২.৫২ লাখ।

বিএমইটির মতে, গত বছর অদক্ষ কর্মীদের অভিবাসনও (স্বল্প দক্ষ হিসেবে উল্লিখিত) বেড়েছে। এটি বাংলাদেশের মোট বিদেশি কর্মসংস্থানের ৫০ শতাংশ, যেখানে দক্ষ কর্মীর হার ২৫ শতাংশ।

নিয়োগকারীদের মতে, প্রধানত দক্ষ খাতগুলোর মধ্যে রয়েছে ড্রাইভার, পরিচর্যাকারী, গৃহকর্মী, আতিথেয়তা কর্মী, ইলেকট্রিশিয়ান, কোয়ালিটি কন্ট্রোল সুপারভাইজার, রেফ্রিজারেশন ও এয়ার কন্ডিশনার টেকনিশিয়ান ইত্যাদি।

গত বছর ডাক্তার, নার্স, প্রকৌশলী ও প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সহ ৫০ হাজার ১৫৮ জন পেশাদার কর্মীকেও বিদেশে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ। আগের বছর এ সংখ্যা ছিল মাত্র ৩ হাজার ৬৪০ জন।

যেসব কারণে রেমিট্যান্স বাড়ছে না

এদিকে অভিবাসন বিশেষজ্ঞ এবং ব্যাংকাররা বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও রেমিট্যান্সের মধ্যে পার্থক্যের জন্য তিনটি প্রাথমিক কারণকে চিহ্নিত করেছেন। এক. স্বল্পদক্ষ পেশার আধিক্য, অবৈধ অর্থ স্থানান্তর চ্যানেলের ব্যবহার (হুন্ডি), এবং বিদেশি নিয়োগকারীদের ভুয়া বা প্রতারণামূলক চাকরির প্রস্তাব।

প্রতিশ্রুত চাকরি না পাওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী বলেন, ‘ চাকরি নিশ্চিত না করে কর্মীদের বিদেশে যাওয়ার সুযোগ নেই। যারা তাদের পরিবার ও বন্ধুদের মাধ্যমে সংগ্রহ করা তথাকথিত ফ্রি ভিসা নিয়ে বিদেশে যাচ্ছেন, তারা শেষ পর্যন্ত সমস্যায় পড়েন। অনেকে তাদের নিয়োগকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পরে চাকরি নিশ্চিত করতে অসুবিধার সম্মুখীন হন।”

তিনি জানান,”আমরা একটি মাইলফলক অর্জন করেছি। কারণ রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো বৈধ চাহিদার ভিত্তিতে কর্মী পাঠাতে সক্ষম হয়েছে।”

তিনি আরো বলেন,’যদি কেউ তার গন্তব্যের দেশে কাজ না পায়, তাহলে এর দায় সংশ্লিষ্ট সংস্থার নয়। এ চাহিদাপত্রগুলো বাংলাদেশের দূতাবাসসহ একাধিক পর্যায়ে পর্যালোচনা এবং যাচাই হয়ে থাকে। এরপরই সংস্থাটি কর্মী পাঠানোর অনুমতি পায়।”

বিএমইটির কর্মসংস্থান বিভাগের এক কর্মকর্তা দাবি করেন, অভিবাসীর তুলনায় কাজ খুঁজে পান না এমন শ্রমিকের সংখ্যা খুবই কম।

৪ জানুয়ারি ২০২৪
এজি

এছাড়াও দেখুন

Govt

৪৩তম বিসিএসের গেজেট প্রকাশ : ২০৬৪ জনকে নিয়োগ

৪৩তম বিসিএসের গেজেট জারি করা হয়েছে। সেখানে আগে সুপারিশ করা ২ হাজার ৮০৫ জন থেকে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *