বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে তাঁর সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাঁকে বীর উত্তম খেতাব প্রদান করে। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ১নং সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন।পরবর্তীতে তিনি জাতীয় সংসদের নির্বাচনি এলাকা চাঁদপুর-৫ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন পর পর ৪ বার। এবারেরও তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ।
রফিকুল ইসলাম ১৯৪৩ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর চাঁদপুর জেলার শাহরাস্তি উপজেলার নাওড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করে। তাঁর বাবার নাম আশরাফ উল্লাহ ও মায়ের নাম রহিমা বেগম। তাঁর সহধর্মিণীর নাম রুবি ইসলাম। দাম্পত্য জীবনে তিনি এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জনক। ভাই ছয় বোনের মধ্যে রফিকুল ইসলাম ছিলেন সবার বড়। জন্মস্থান নাওড়া গ্রামেই প্রাথমিক স্কুলের পড়াশোনা শুরু। তবে পিতা সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে স্কুল ইন্সপেক্টর হওয়ায়,বদলির সুবাদে পরিবারের সাথে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে থেকে লেখাপড়া করেন।
তিনি ১৯৫৯ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অন্নদা মডেল হাই স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে মেট্রিকুলেশেন ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে পড়াশোনা করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে রফিকুলইসলাম ছাত্র আন্দোলনে সরাসরি জড়িত হয়ে পড়েন। ১৯৬৫ সালে কাকুল মিলিটারী একাডেমি থেকে বিএসসি পাস করেন। ১৯৮১ সালে তিনি আমেরিকার হার্ভাড বিজনেস স্কুলে সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম কোর্স সম্পন্ন করেন।
রফিকুল ইসলাম ছাত্রাবস্থায় সাংবাদিকতার হাতে খড়ি পান। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে সাংবাদিকতায় যুক্ত হয়ে ‘ইউপিপি’ সংবাদসংস্থায় খন্ডকালিন সাংবাদিকতা করেন। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ২৯ এপ্রিল সেনাবাহিনী থেকে অব্যাহতি নিয়ে ইংরেজি দৈনিক’দি পিপলস ভিউ’র সহযোগী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও বিভিন্ন জার্নাল এবং জাতীয় দৈনিকে সমকালীন বিষয়ে অসংখ্য কলাম লিখেছেন। রফিকুল ইসলাম ১৯৬৩ সালে অফিসার পদে নির্বাচিত হয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন।
১৯৬৫ সালে পাকিস্তান কাকুল মিলিটারি একাডেমি থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরে কমিশন অর্জন করেন। একই সময়ে বিএসসি ডিগ্রি পরীক্ষায় উর্ত্তীর্ন হন। ১৯৬৮ সালে লাহোর ক্যান্টনমেন্ট থেকে পূর্ব পাকিস্তানে বদলি হন এবং তৎকালিন যশোর ক্যান্টনমেন্ট রেজিমেন্টের অ্যাডজুট্যান্ট হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। কিছুদিন দায়িত্ব পালন শেষে দিনাজপুরে ইপিআরের ৮ নম্বর উইংয়ের অ্যাসিসটেন্ট উইং কমান্ডার পদে বদলি হন। পরে ১৯৭০ সালের প্রথম দিকে ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলসের চট্টগ্রাম সেক্টর হেডকোয়ার্টারে অ্যাডজুট্যান্ট পদে নিয়োগ পান। সেখান থেকে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সেক্টর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পান।
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ২৯ এপ্রিল সেনাবাহিনী থেকে অব্যাহতি পান। সামরিক শাসক এরশাদ সরকারের পতন হলে ১৯৯০ সালে দেশের প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টার (মন্ত্রী পদমর্যাদায়) দায়িত্ব পান। তিনি ডিসেম্বর ১৯৯০ সাল থেকে ২০ মার্চ ১৯৯১ সাল পর্যন্ত ওই সরকারের মন্ত্রী পদমর্যদায় নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ সালে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন এবং চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ -শাহরাস্তি নির্বাচনি এলাকা চাঁদপুর-৫ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারে তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হাজিগঞ্জ শাহরাস্তি এলাকা থেকে আবারও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত জাতীয় সংসদের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে একই আসন থেকে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চতুর্থবারের মত নির্বাচিত হন এবং নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং‘মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়’ ও ‘পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়’ সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন।
মুক্তিযুদ্ধে অবদান
১৯৭১ সালে রফিকুল ইসলাম পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন পদে চট্টগ্রামে ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস-এ অ্যাডজুট্যান্ট হিসেবে প্রেষণে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন। ১৯৭১ সালে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে সেনা মোতায়েন পরিস্থিতি দেখে এবং দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে তিনি স্বাধীনতার প্রয়োজনে বিদ্রোহ করার সিদ্ধান্ত নেন এবং তদনুযায়ী প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। তিনি তার অধীনস্থ বাঙালি অফিসার ও সিপাহিদের সাথে আলোচনা করে কর্তব্য স্থির করেন এবং সেনাবাহিনীতে কর্মরত বাঙালি অফিসারদের সাথে গোপন বৈঠক করে প্রয়োজনে বিদ্রোহের জন্যে উদ্বুদ্ধ করেন।
১৯৭১ এর ২৪ মার্চ রাতেই ক্যাপ্টেন রফিকুল ইসলাম কার্যত: বিদ্রোহ শুরু করেন। তাঁর আদেশ পেয়ে সীমান্ত ফাঁড়িতে বাঙালি সৈন্যরা অবাঙালি সিপাহিদের নিরস্ত্র ও নিষ্ক্রিয় করে চট্টগ্রামে এসে প্রতিরোধ যুদ্ধে যোগদানের জন্যে প্রস্তুত হয়। পরবর্তীতে ক্যাপ্টেন রফিক তাঁর বাহিনী নিয়ে চট্টগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চলে যুদ্ধ করেন এবং ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে তাঁর হেডকোয়ার্টার সীমান্তের ওপারে হরিণায় স্থাপন করতে বাধ্য হন।
পরবর্তীতে এখান থেকেই তিনি ১নং সেক্টর কমান্ডার হিসেবে চট্টগ্রাম এলাকায় যুদ্ধ পরিচালনার দায়িত্বে ন্যস্ত হন। ১৭ ডিসেম্বও ১৯৭১ ক্যাপ্টেন রফিকুল ইসলাম চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে পাকিস্তানি পতাকা নামিয়ে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। তিনি হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তির উন্নয়নের রূপকার ।
দ্বাদশ নির্বাচন প্রসঙ্গ
৭ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে । প্রার্থীর সংখ্যা ৭ জন। তিনি ৮৩ হাজার ২শ ২৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন এবং ১০ জানুয়ারি গণভবনে ৫ম বারের মত জাতীয় সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।
চাঁদপুর-৫ হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি আসনে ২টি পৌরসভা ও ২২টি ইউনিয়নে ১’শ ৪১টি ভোটকেন্দ্র ও ৭’শ ৮৫টি ভোটকক্ষ রয়েছে । ভোটার সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৮ হাজার ৪’শ ৯৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ২ লাখ ৫ হাজার ২’শ ৫০ জন এবং মহিলা ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৩ হাজার ২’শ ৪৬ জন। ফলে ১শ ৪১ জন প্রিজাইডিং অফিসার,সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ৭’শ ৮৫ জন ও ১ হাজার ৫শ ৭০ জন পোলিং অফিসার ভোটগ্রহণের দায়িত্বপালন করেন।
আবদুল গনি
জানুয়ারি ১১,২০২৪
এজি