৫ স্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা বেষ্টনী ও সিসি ক্যামেরার আওতায় হাজীগঞ্জে ২৯ টি মন্ডপে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা আজ ৯ অক্টোবর বুধবার থেকে শুরু হতে যাচ্ছে।
থাকছে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের মনিটরিং সেল, সেনাবাহিনী, র্যাব ,পুলিশ ,বিজেবি ও আনসার বাহিনী সার্বক্ষণিক চৌকষ টহল ও নজরদারী। সারাদেশে ও চাঁদপুর জেলার বাকি ৭ উপজেলায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা শুরু হবে।
সরকারি হিসেবে সারাদেশে এ বছর ৩২ হাজার ৬শ ৬৬টি মন্ডপে দুর্গাপূজা উদযাপিত হবে। চাঁদপুর জেলার ৮ উপজেলায় ২শ ২০ টি মন্ডপে এবার দুর্গাপূজা উদযাপন হবে ।
চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সমাবেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা উপলক্ষে বিদ্যমান সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সুরক্ষায় সব পক্ষকে সমন্বিত উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন।
একই সঙ্গে কোনো ধরনের বিচ্ছিন্ন ঘটনার জের ধরে সম্প্রীতিতে যেন বিন্দুমাত্র চিড় না ধরে, সে ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সজাগ থাকতে ধর্মীয় নেতা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সাংবাদিক প্রতিনিধি, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ সহ সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দেন, জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আব্দুর রকিব। মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একি মিত্র চাকমার সভাপতিত্বে সভা টি হয়েছিল ।
৬ অক্টোবর রবিবার মতলব উত্তর উপজেলা সম্মেলন কক্ষে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসিন উদ্দিন।
তিনি বক্তব্য প্রদানকালে আরো বলেন,‘বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এ দেশে প্রত্যেকে স্বাধীনভাবে নিজ ধর্ম পালন করেন। স্বত:স্ফূর্তভাবে মানুষের মুখে মুখে ফেরে এক মহৎ বাক্যবন্ধ ‘ধর্ম যার যার, দেশ সবার’। হাজার বছর ধরে এ ভূখন্ডে লালিত হয়েছে এমন উদার মানসিকতা।
যুগ যুগ ধরে মুসলিম,হিন্দু,বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ সব ধর্মের মানুষ নিয়ে গড়ে উঠেছে আমাদের সুমহান সংস্কৃতি। সব ধর্মের মৌলিক অধিকার রক্ষায় রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন একসঙ্গে কাজ করছে। জুলাই বিপপ্লবের পর সুযোগসন্ধানী দুর্বৃত্তরা অরাজকতা সৃষ্টি করতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
সচেতন ছাত্র-জনতা পাহারা বসিয়ে উপাসনালয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সচেষ্ট আছে। ধর্মীয় কারণে কোথাও কারও ওপর হামলা হলে, উপাসনালয়ে আঘাত এলে,দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।
সরকারের স্পর্শকাতর কর্মপন্থায় ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সবার মতামত গ্রহণের চর্চা থাকা প্রয়োজন। এতে সম্প্রীতি ও সহনশীলতা বৃদ্ধি পাবে,যা সবার কামনা। জুলাই বিপ্লবে,ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যে নতুন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটেছে,সেখানে বিভিন্ন মঞ্চে, সমাবেশে বারবার উচ্চারিত হয়েছে দেশটা সবার, এখানে কেউ সংখ্যাগুরু বা সংখ্যালঘু নয়।
কেউ উড়ে এসে জুড়ে বসেনি; সবাই এ দেশের সন্তান। সমন্বিত প্রচেষ্টা এবং প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সর্বোচ্চ সতর্কতায় বরাবরের মতোই দুর্গোৎসবের এ বর্ণাঢ্য উদযাপন যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদায় নিবিঘ্ন ও উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে নি:সন্দেহে। ’
এ ব্যাপার উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাপস শীল বলেন,‘ সার্বজনীন পূঁজামন্ডপগুলোতে সি.সি ক্যামেরা নিশ্চিত করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সকলের সহযোগিতা কামনা করছি ।’
বিষযটি নিশ্চিত করে হাজীগঞ্জ থানা অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মহীউদ্দিন ফারুক বলেন, ‘প্রতিটি পূঁজামন্ডপে ৫ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে। শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গোৎসব পালন করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।’
হাজীগঞ্জ উপজেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বাবু সত্য ভদ্র ব্রত মিঠুন বলেন, ‘রশারদীয়া দুর্গোৎসবের সার্বিক প্রস্তুতি সন্তোষজনক। তবে প্রতিটি পূঁজামন্ডপে আয়োজকদের সরকারের নির্দেশনানুযায়ী নিয়ম মেনে সকলের সাথে সসমন্বয় করে উৎসব পালন করতে হবে।’
প্রসঙ্গত , শুভ মহালয়ায় দেবীর আবাহন শেষে এখন মন্ডপে-মন্ডপে দেবী বরণের প্রস্তুতি চলছে। কৈলাশ থেকে মর্ত্যলোকে আসবেন দেবী দুর্গা। এ উৎসব ঘিরে,সারাদেশের মন্ডপে-মন্ডপে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।
এদিকে প্রতিমা তৈরিতে মাটির কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। এখন রং-তুলির আঁচড় শেষে প্রতিমা মন্ডপে নেওয়ার অপেক্ষায় সবাই। তাই ব্যস্ততায় দিন-রাত এক করে ফেলছেন প্রতিমাশিল্পীরা। দম ফেলার সময় নেই প্রতিমা শিল্পী ও আয়োজকদের।
এদিকে পূজায় মন্দিরে আগত দর্শনার্থীদের নজর কাড়তে,সাজসজ্জায় নানা উপকরণ ব্যবহার করা হচ্ছে। বিভিন্ন মন্দিরে এখন চলছে থিমভিত্তিক সাজসজ্জার কাজ। সারাদেশে বইছে উৎসবের আমেজ। সায়ংকালে ধূপের ধোঁয়া, ঢাক-ঢোল, উলুধ্বনি আর কাঁসর-মন্দিরার সঙ্গে ভক্তিমন্ত্রে মেতে উঠবে পূজামন্ডপ।
৯ অক্টোবর মহাষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হবে দুর্গোৎসব। এরপর মহাসপ্তমী, মহাঅষ্টমী, মহানবমী ও দশমীতে ১৩ অক্টোবর বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে ৫ দিনব্যপি এ উৎসবের শেষ হবে। এ বছর দেবী দুর্গা মর্তে আগমন করবেন দোলায় আর ঘোড়ায় চড়েই তিনি ফিরে যাবেন স্বর্গলোকে।
শিল্পীদের যেন দম ফেলার ফুসরত ছিলনা ।
তাদের নিখুঁত হাতের ছোঁয়ায় কৃত্রিম জীবন পাবেন দেবী দুর্গা,শিব, লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ, অসুরসহ অন্যান্য প্রতিমা। এছাড়া কোনো কোনো প্রতিমায় আবার পরানো হচ্ছে শাড়ি, হাতের বালাসহ নানা গহনা। পাশাপাশি আলোক সজ্জা,প্যান্ডেল তৈরি, মন্ডপ ও তার আশপাশে সাজসজ্জার কাজসহ নানা কাজেও ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন পূজার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। ফলে দুর্গোৎসব উপলক্ষে হিন্দু ধর্মাবম্বীদের মধ্যে বিরাজ করছে সাজ সাজ রব। কেউ কেউ কেনা কাটায় ব্যস্ত সময় পার করেছেন।
‘মহা চন্ডী’তে উল্লেখ আছে,ত্রেতা যুগে ভগবান রাজা রাম চন্দ্র দশানন রাবণের সঙ্গে যুদ্ধে রত হন। পাপের বিনাশের লক্ষ্যে দেবী আদ্যাশক্তি মহামায়ার কাছে শক্তি বৃদ্ধির আশায় শরৎ কালে তার পূজা করেছিলেন এবং যুদ্ধে জয়লাভ করে দেবী সীতাকে উদ্ধার ও রাবণকে হত্যা করতে সক্ষম হন। সেই থেকে পৃথিবীতে প্রতি বছর শরৎকালে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা দুর্গোৎসব পালন করে আসছেন।
২ অক্টোবর মহালয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে এ বছরের শারদ উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। পিতৃপক্ষের অবসান ও দেবী পক্ষের শুরুর তিথি এ মহালয়া।হিন্দু শাস্ত্রমতে,মহালয়া তিথিতে দেবী দুর্গাকে মর্ত্যে আমন্ত্রণ জানানো হয়। এ দিন ভোরে চন্ডীপাঠের মধ্য দিয়েই মর্ত্যলোকে দেবী দুর্গাকে এ আমন্ত্রণ জানানো হয়। আর এর মধ্য দিয়ে শুরু হয় দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা।
পূজাকে সামনে রেখে এরই মধ্যে জেলা প্রশাসন প্রস্তুতিমূলক সভা করেছে। পূজা মন্ডপের নিরাপত্তা,আইনশৃঙ্খলা সমুন্নত রাখা ও প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সরকার তার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।
পূজার প্রস্তুতি নিয়ে ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও কর্মকর্তাগণ বৈঠক করেছেন। এতে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, ঢাকা মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটিসহ বিভিন্ন অংশীজনরাও অংশ নিয়েছেন।
আজ সকাল ৮টা ৪৪ সেকেন্ডের মধ্যে মহাষষ্ঠী কল্পনারম্ভ শেষ করতে হবে। শায়ণকালে দেবীর অধিবাস ও আমন্ত্রণ। ১০ অক্টোবর সকাল ৭টা ৫৩ মিনিট ২৭ সেকেন্ডের মধ্যে দেবীর মহাসপ্তমী পূজা শেষ করতে হবে।
১১ অক্টোবর সকাল ৬টা ৫২ মিনিটের মধ্যে মহাষ্টমী পূজা ও ৬ টা ৫২ মিনিটে আরম্ভ এরপরেই কুমারী পূজা। পরে ৭টা ৪১ মিনিটের মধ্যে সন্ধী পূজা শেষ করতে হবে। ওইদিনই সকাল ৭টা ৪১ মিনিট পর মহানবমী আরম্ভ ও ৯ টা ৫৭ মিনিটের মধ্যে মহানবমীর বিহিত পূজা শেষ করতে হবে।
১২ অক্টোবর ৬টা ১২ মিনিটের মধ্যে মহানবমীর বিহিত অধিক পূজা শেষ করতে হবে। একই দিন সকাল ৭টা ৩৭ গতে পূর্বাহ্নের মধ্যে দশমী পূজা সমাপনান্তে বিসর্জন। পূজার প্রস্তুতি এখন প্রায় সম্পন্ন।
সারা দেশেই কেন্দ্রীয় ও প্রান্তিকপর্যায়ে ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে পূজার। ইতোমধ্যে আমরা সারাদেশে নির্দেশনা দিয়েছি ধর্মীয় ভাবগম্ভীর্য বজায় রেখে পূজা করার জন্য। সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে পূজার সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে।
ইতোমধ্যে সরকারের সঙ্গে আমরা বৈঠক করেছি। সেখানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাসহ আইজিপি ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন,পূজাকে ঘিরে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে না।
এমনকি প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। প্রত্যেকটি পূজামন্ডপে নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সবার মধ্যে আস্থার মনোভাব রয়েছে। আশা করছি,শারদীয় দুর্গোৎসবে কোন সমস্যা হবে না।
শাখাওয়াত হোসেন শামীম
৯ অক্টোবর ২০২৪
এজি