চাঁদপুরে চলতি বছরের ২০২৩-২৪ এর জানুয়ারি-জুন এ ৬ মাসে ৩ লাখ ৬৫ হাজার প্রবাসী থেকে ৬০৭ কোটি ৯১ লাখ টাকার বৈদেশিক রেমিট্যান্স অর্জন করেছে ব্যাংকগুলো।
সংশ্লিষ্ট চাঁদপুরের ৫ রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংকের আঞ্চলিক অফিস থেকে ৩ জুলাই ২০২৪ প্রাপ্ত তথ্য মতে,সোনালী ব্যাংকের ২০টি শাখায় ১৬ কোটি ২৫ লাখ টাকার বৈদেশিক রেমিট্যান্স,জনতা ব্যাংকের ১৭টি শাখায় ২৯৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকার বৈদেশিক রেমিট্যান্স,অগ্রণী ব্যাংকের ২১টি শাখায় ১২০ কোটি ৬৯ লাখ টাকা, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ২৮টি শাখায় ১৬৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকা,রূপালী ব্যাংকের ১৩ টি শাখায় ১২ কোটি ৫৫ লাখ টাকার রেমিট্যান্স অর্জন করে।
চাঁদপুরে অন্যান্য ব্যাংকের আঞ্চলিক কার্যালয় নেই এ অজুহাতে কোনো কোনো ব্যাংক তথ্য দিচ্ছে না। আবার বলেন-তাদের কাছে এর কোনো তথ্য নেই। ফলে ্ঔ হিসেব এখানে উল্লেখ করা যাচ্ছে না। আবার কোনো কোনো প্রবাসী সরকারিভাবে নিষিদ্ধ অর্থ লেন-দেনকারী এজেন্সীর মাধ্যমে বিদেশ থেকে যে টাকা পাঠিয়ে থাকে তা ’ ব্যাংকের খাতায় এর কোনোই হিসেব নেই।
কোনো কোনো দেশ থেকে বিকাশেও টাকা পাঠানো হয়। তারও হিসেব রেমিট্যান্সের টালিতে আসছে না। আরো প্রবাসী বন্ধুরা বিদেশ থেকে দেশে আসার সময় নগদ ডলার বা অন্য মুদ্রা নিয়ে আসে। এর হিসেবও নেই ব্যাংকের কাছে। তা ’ নাহলে দেশের মানুষ জানতো কী পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে আমাদের সোনার ছেলেরা । আমরা দেখেছি-ব্যাংকগুলো কাঙ্খিত গ্রাহককে পাঠানোর পর পরই টাকা দিয়ে দিচ্ছে। মোবাইল নাম্বারে ও গোপন পিন কোডে টাকা প্রদানের সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে দেশের প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থা।
গ্রামের প্রবাদ বাক্যে বলা যায়-‘ ভিজা দড়ির বান ; চিৎ হয়ে দে টান’। বর্তমানে ব্যাংক খাতে সেই পুরানো, মরিচাধরা, জরাজীর্ণ পদ্ধতি নেই। সুতরাং ব্যাংকিং খাতেও আমুল পরিবর্তন এসেছে। সর্বক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তিতে এখন ব্যাংকিং সকল প্রকার কাজ চলছে। তা’নাহলে মধ্যপ্রচ্য থেকে টাকা পাঠানোর কয়েক সেকেন্ডেইয় কতটা উন্নয়ন বিদ্যমান। পারিবারিক বন্ধন, আত্মীয়তা,সামাজিকতা, সামাজিক বিভিন্ন কর্মকান্ড ও ওয়াজ মাহফিল প্রবাসীদের দান-অনুদানে এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত। ব্যাংক কর্মকর্তারা বলেছেন,করোনা পরিস্থিতিতে বিশ্ব অর্থনীতির গতি ফিরছে।
আমাদের দেশের যে পরিমাণ রেমিটেন্স দেশে এসেছে তা সত্যি প্রশংসার দাবি রাখে। দেশের ব্যাংকিং সেক্টরে বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানোর সহজ উপায়ে করার ব্যবস্থা করে দিয়েছে সরকার। সরকারের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়,জনশক্তি কর্মসংস্থান ব্যুরো,প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সকল প্রবাসীদের সমস্যা সমাধানের কাজ করছে। প্রবাসীদের মৃত্যুজনিত কারণে বিশেষ স্বজনহারানো পরিবারকে সরকারি সহায়তা দেয়া হচ্ছে। এসব টাকা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সকল প্রকার সহযোগিতা দিচ্ছে জনশক্তি ও কর্মসংস্থান ব্যুরো ।
জনশক্তি ও কর্মসংস্থান প্রশিক্ষণ ব্যুরোর সহকারী পরিচালক মো. সফিকুর রহমান ২৮ জুলাই বেলা ১ টায় জানান, ২০০৫ সাল থেকে শুরু হওয়া ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত ৫ লাখ ৩ হাজার ৯শ ১৬ জনকে ৩ দিনের ঔ প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। ২০২৩-২৪ সালে জনশক্তি ও কর্মসংস্থান প্রশিক্ষণ ব্যুরোতে ফিঙ্গার টেস্ট দিয়েছে ১৪ হাজার ৫শ ৪৩ জন। এদের অনেকেই বিদেশে যাওয়ার পথে রয়েছে।’
তিনি আরো বলেন,‘ বৈধভাবে বিদেশ গেলে সরকার তাদের সবধরনের সেবা দেবে । উদাহরণ স্বরূপ বলেন- ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠালে-ব্যাংক দিবে ২.৫০% এবং সরকার ২.৫০ % প্রণোদনা,মৃত্যুজনিত ভাতা,সিআইপি মর্যাদা, নিরাপত্তা ,সন্তানদের বৃত্তি , প্রতিবন্ধি ভাতাসহ সুযোগ সুবিধা পাবে।’
চাঁদপুর সদরের কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভার-প্রাপ্ত অধ্যক্ষ শিরিন আক্তার ২৮ জুলাই মোবাইলে জানান, গত নভেম্বরে এটি চালূ হয়েছে। তাই দু ব্যাচে-প্রায় ২শ জনের মত প্রবাসে যেতে ইচ্ছুকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।’
চাঁদপুরের জনতা ব্যাংকের ডিজিএম মো.মুনিরুল ইসলাম মুজিব বলেন, ‘ এ বছর জনতা ব্যাংক রেমিটেন্স অর্জনে দেশে প্রথম হয়েছে। আমাদের দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের চাবিকাঠি হলো রেমিটেন্স। এতে ব্যাংকের রিজার্ভ বাড়ছে। মানুষের আর্থিক সচ্ছলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি দৈনন্দিন জীবনে বৈদেশিক রেমিটেন্স একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। চাঁদপুরসহ দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে রেমিটেন্টেসর ভূমিকা অপরিহার্য।
বিশেষ করে চাঁদপুরের গ্রামে-গঞ্জে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের কারণে প্রতিটি বাড়িতে দৃষ্টিনন্দন ভবন দেখা যাচ্ছে। জনতা ব্যাংক রেমিটেন্সর ক্ষেত্রে সবাই সজাগ দৃষ্টি রাখছে। সরকারের পাশাপাশি জনতাা ব্যাংক শতকরা ২.৫০% হারে প্রণোদনা দিচ্ছে এবং গৃহীতাকে সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে যাচ্ছে ।’
৩ জুলাই বিকেলে চাঁদপুরের রেমিটেন্স অর্জন সম্পর্কে জানতে তারঁ কার্যালয়ে তিনি উপরোক্ত বত্তব্য দেন।
এ সব টাকা কর্মজীবী প্রবাসীগণ মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশে^র বিভিন্ন দেশ থেকে স্ব স্ব ব্যাংক হিসেবের মাধ্যমে প্রেরণ করেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন এজেন্সি গুলো এসব প্রেরণ করার পর বাংলদেশ ব্যাংক মাধ্যমে স্ব স্ব জেলার ঔ সব ব্যাংকের শাখায় প্রেরণ করে। বর্তমানে প্রতিটি ব্যাংকে বৈধভাবে ব্যাংকের মাধ্যমে দেয় ২.৫০% এবং সরকার দেয় ২.৫০ % মোট ৫% প্রণাদনা। সংশ্লিষ্ঠ ব্যাংক ব্যতীত অন্যকোনো ভাবে টাকা প্রেরণ করণে এ প্রণোদনা গ্রাহক পাচ্ছে না।
চাঁদপুরে রূপালী ব্যাংকের সিনিয়র কর্মকর্তা চাঁদপুরের রেমিটেন্স অর্জন সম্পর্কে বলেন,‘ আমাদের দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের চাবিকাঠি হলো রেমিটেন্স। এতে ব্যাংকের রিজার্ভ বাড়ছে। মানুষের আর্থিক সচ্ছলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি দৈনন্দিন জীবনে বৈদেশিক রেমিটেন্স একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
চাঁদপুরসহ দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে রেমিটেন্টেসর ভূমিকা অপরিহার্য। বিশেষ করে চাঁদপুরের গ্রামে-গঞ্জে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের কারণে প্রতিটি বাড়িতে দৃষ্টিনন্দন ভবন দেখা যাচ্ছে। রূপালী ব্যাংক তাদের সার্বিক লেনদেনের জন্য যথেষ্ট আন্তরিকতার সহিত কাজ করে থাকে।’
আবদুল গনি
৩১ জুলাই ২০২৪
এজি