Friday , 3 January 2025
sana

ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’: বিপদমুক্ত বাংলাদেশ, আঘাত হেনেছে ওড়িশায়

বঙ্গোপসাগর ও আশপাশের এলাকার গভীর নিম্নচাপের কারণে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছিল। উপকূলে আছড়ে পড়ার আগে এটির শক্তি কিছুটা কমে যায়। ফলে যেরকম ক্ষতি হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছিল সেরকমটি হয়নি। তবে দেশের পটুয়াখালী জেলায় বেশকিছু ক্ষতি হয়েছে। জেলায় বিধ্বস্ত হয়েছে অসংখ্য ঘরবাড়ি, উপড়ে পড়েছে গাছপালা। ৪ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র প্রভাবে শুক্রবারও সাগরে ঝোড়ো বাতাস লক্ষ্য করা গেছে। এ কারণে সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়। একই সঙ্গে দেশের বিভিন্ন জায়গার ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাসও দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

আবহাওয়াবিদ মো.হাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উড়িষ্যা-পশ্চিমবঙ্গ উপকূলীয় এলাকায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে শুক্রবার রাত ৩টায় ২৫ অক্টোবর উত্তর উড়িষ্যা উপকূল অতিক্রম করেছে। এ ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দরগুলোর ওপর দিয়ে দমকা বা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে পরের ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, রংপুর,রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অনেক জায়গায় এবং ঢাকা, ময়মনসিংহ, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।

সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। এ সময় সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে।

এদিকে ভারতের ওড়িশার ভিতরকণিকা এবং ধামরা দিয়ে উপকূলে আঘাত হানা ‘দানা’র প্রভাবে শক্তিশালী দমকা হাওয়া ও ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। তবে ঘূর্ণিঝড়ে দেশটিতে বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। ওড়িশায় এটির আঘাতে কেউ মারা যাননি। যদিও পশ্চিমবঙ্গে একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, ওড়িশায় আঘাতের পর ভারতের অন্য দু রাজ্য ছত্তীসগঢ় ও মধ্যপ্রদেশের দিকে আগায় দানা। তবে তার আগে এটি প্রবল ঘূর্ণিঝড় থেকে সাধারণ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়। দেশটির সংবাদমাধ্যম জানায়, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে এগারোটার দিকে ধামারায় দানার স্থলভাগের আছড়ে পড়ার মাধ্যমে ঘূর্ণিঝড়টির ল্যাান্ডফল প্রক্রিয়া শুরু হয়। এরপর শুক্রবার সকালে ল্যান্ডফল প্রক্রিয়া শেষ হয়। যখন ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানে তখন ঘণ্টায় এটির বাতাসের গতিবেগ ছিল প্রায় ১২০ কিলোমিটার।

এদিকে কাল শনিবার সকাল ৯টা পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়,খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, ঢাকা,ময়মনসিংহ, বরিশাল,চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এসময় সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে।

আগামী রোববার সকাল ৯টা থেকে পরের ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। এসময় সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। এরপর বৃষ্টিপাতের প্রবণতা হ্রাস পেতে পারে।

আবহাওয়া বিভাগ জানায়, ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে শঙ্কায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে আজ শনিবার সকাল পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

পটুয়াখালীতে অসংখ্য ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত, আহত ৪

দৈনিক বাংলার পটুয়াখালী প্রতিনিধির দেওয়া তথ্যমতে, ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ ভারতের উড়িষ্যা উপকূল অতিক্রম করলেও পটুয়াখালীতেও এর প্রভাব পড়েছে। শুক্রবার সকাল থেকে উপকূলে প্রচণ্ড বাতাস বইছে। বঙ্গোপসাগর বেশ উত্তাল রয়েছে। বড় বড় ঢেউ তীরে আছড়ে পড়ছে। এদিকে ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় রেখে গেছে ক্ষত চিহ্ন। বিধ্বস্ত হয়েছে অসংখ্য ঘরবাড়ি, উপড়ে পড়েছে গাছপালা। ৪ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে কৃষি খাতে তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার বিকেলে ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে মির্জাগঞ্জ উপজেলার দেউলী গ্রামের ৭ টি বসতঘর পুররোপুরি বিধ্বস্ত হয়। এছাড়া কলাপাড়া উপজেলার তাহেরপুর গ্রামের ১০টি বসতঘর ও রাঙ্গাবালী উপজেলার চালিতাবুনিয়ায় একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত।

এসময় চারজন আহত হয়। এদের মধ্যে দেউলী গ্রামের রুনা বেগম নামের এক নারীর পা ও তাহেরপুর গ্রামের মনোয়ারা বেগম নামের এক নারীর হাত ভেঙে যায়। এছাড়া উপড়ে পড়েছে অসংখ্য গাছপালা। এদিকে কলাপাড়ার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের গইয়তলা গ্রামের বেড়িবাঁধ আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসন।

খুলনায় রাতভর ভারী বৃষ্টি, কেটেছে দানার প্রভাব

খুলনার স্থানীয় প্রতিনিধির দেওয়া তথ্য থেকে জানা যায়,ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র প্রভাবে খুলনা অঞ্চলে শুক্রবার রাতভর ভারী বৃষ্টি হয়েছে। ভোরের আলো ফুটতেই খুলনার পরিবেশ আকাশ পরিষ্কার হয়ে ওঠে। এ পর্যন্ত খুলনায় ৬৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস।

খুলনার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নদীতে জোয়ারের পানি স্বাভাবিক সময়ের মতো প্রবাহিত হচ্ছে। ভৈরব, রূপসা ও কাজী বাছার পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক রয়েছে। শহরের নিম্নাঞ্চল বাদে অন্য অঞ্চলে তেমন পানি জমে নেই। মানুষের জনজীবন এবং যান চলাচল একেবারে স্বাভাবিক। তবে দানার প্রভাব কাটলেও খুলনা উপকূলের উপজেলায় মানুষের বেড়িবাঁধ নিয়ে আতঙ্ক এখনো কাটেনি।

খুলনা জেলা প্রশাসক মো.সাইফুল ইসলাম বলেন,‘বুধবার দুপুরের পর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা হয়। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলার জন্য ৬০৪টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়। যাতে পরিস্থিতি অনুযায়ী ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার লোকজন আশ্রয় নিতে পারেন। এসব শেল্টারে মোট তিন লাখ ১৫ হাজার ১৮০ জন আশ্রয় নিতে পারবে। এ ছাড়া তিনটি মুজিব কিল্লায় ৪৩০ জন মানুষ ও ৫৬০টি গবাদিপশু রাখা যাবে।’

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব নেই মোংলায়, পণ্য ওঠানামা স্বাভাবিক

স্থানীয় মোংলা প্রতিনিধি জানায়,ঘূর্ণিঝড় দানার তেমন কোনো প্রভাব নেই মোংলায়। শুক্রবার ভোর থেকে এখানকার আবহাওয়া অনেকটা স্বাভাবিক রয়েছে। ভোর থেকেই মোংলা বন্দরসহ সংলগ্ন উপকূলের আকাশ রৌদ্রোজ্জ্বল, তাই ভ্যাপসা গরমও পড়ছে। নেই বৃষ্টি ও বাতাস।

তবে শুক্রবারও মোংলা সমুদ্র বন্দরে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত বহাল রয়েছে। স্বাভাবিক রয়েছে মোংলা বন্দরে পণ্য বোঝাই-খালাস ও পরিবহনের কাজ। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার কমান্ডার সাইফুর রহমান ভুইয়া বলেন, বৃষ্টির কারণে বুধবার বন্দরে অবস্থানরত বিদেশী বানিজ্যিক জাহাজের পণ্য ওঠানামার কাজ ব্যাহত হয়। কিন্তু শুক্রবার সকাল থেকে তা পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়েছে।

২৫ অক্টোবর ২০২৪
এজি

এছাড়াও দেখুন

BCS==

৪৭তম বিসিএসের আবেদন শুরু

৪৭তম বিসিএসের আবেদন শুরু হয়েছে। সকাল ১০টা ৩০ মিনিট থেকে অনলাইনে আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *