চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে ঈদুল আজহা উদযাপিত হয়। প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদা,ভাবগাম্ভীর্য ও উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে সারাদেশের মতো চাঁদপুরের হাজীগঞ্জেও মুসলমানদের অন্যতম বড় এ ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আযহা উদযাপিত হয়েছে।
মহান আল্লাহর অপার অনুগ্রহ লাভের আশায় ঈদের জামাত শেষে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা সামর্থ্য অনুযায়ী পশু কুরবানি করেছেন। নামাজ শেষে মুসল্লিদের অনেকেই কবরস্থানে ছুটে গেছেন। চিরবিদায় নেয়া তাদের স্বজনদের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে অশ্রুসজল চোখে এ আনন্দের দিনে তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে আল্লাহর দরবারে আকুতি জানান। পশু কুরবানির ক্ষেত্রে হাজীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আ স ম মাহবুব-উল আলম লিপনের নির্দেশনা যথাযথভাবে পালন করা হয়েছে বলে জানা গেছে। দ্রুত বর্জ্য অপসারণ করতে মাঠে নেমেছে পৌরসভার পরিচ্ছন্ন কর্মীরাও ।
এদিকে হাজীগঞ্জে ঈদুল আযহার পর পর ৩টি প্রধান জামায়াতই অনুষ্ঠিত হয়েছে হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদে। জিলহজ্ব মাসের ১০ তারিখে ঈদুল আজহা উদযাপিত হলেও পরের দু’দিনও পশু কুরবানি করার বিধান রয়েছে। সামর্থ্যবান মুসলমানদের জন্য কুরবানি ওয়াজিব হলেও ঈদের আনন্দ থেকে দরিদ্র-দুস্থরাও বঞ্চিত হননি। কুরবানির পশুর চামড়া বিক্রির সমুদয় অর্থ বা চামড়া এতিমখানায় এবং কুরবানি দেয়া পশুর মাংসের তিন ভাগের এক ভাগ দরিদ্র-দুস্থদের মধ্যে বন্টন করে দেয়ার বিধান রয়েছে।
প্রতিবছরই প্রতিষ্ঠাতা,ওয়াকিফ ও মোতওয়াল্লী আলহাজ মরহূম আহমদ আলী পাটওয়ারী রহ.ওয়াকফ এ্যাস্টেট কর্তৃক পরিচালিত চাঁদপুর জেলার সর্ববৃহৎ,প্রাচীন ও ঐতিহাসিক বড় মসজিদে ঈদুল আযহার ৩টি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। তাই মসজিদের মোতওয়াল্লী ও সমাজ বিজ্ঞানী প্রিন্স শাকিল আহমেদ সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ বজায় রেখে ঈদের নামাজ আদায় করতে পারায় সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসন,পৌর মেয়র,পৌর কর্মকর্তা,বিদ্যুৎবিভাগ, বাজার ব্যবসায়ী,হাজীগঞ্জের সকল পর্যায়ের রাজনৈতিক ব্যাক্তিবর্গ,হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদ কমপ্লেক্স এর আওতাধীন সকল শিক্ষক-কর্মচারী-শিক্ষার্থী,মসজিদের কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণের সহায়তায় সুন্দর,পরিচ্ছন্ন পরিবেশে ঈদের জামাতগুলো সর্বাধিক সহায়তায় জামাতগুলো সম্পাদন করতে পেরে সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
প্রসঙ্গত-ঈদুল আযহার প্রথম জামায়ত সকাল সাড়ে ৬ টায় অনুষ্ঠিত হয় এবং নামাজের ইমামতি করেন পেশ ইমাম ও খতিব মুফতি আবদুর রউফ। দ্বিতীয় জামায়াত অনুষ্ঠিত হয় সকাল ৮ টায় এবং ইমামতি করেন মাও.হাফেজ আনাস এবং শেষ জামায়াত অনুষ্ঠিত হয় সকাল ১০ টায়। ইমামতি করেন হাফেজ মাও.এমদাদুল হক।
আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় মসজিদ জুড়ে প্রত্যেকটি ঈদের জামায়াত খুবই সুন্দর পরিবেশে সম্পন্ন হয়। ছোট-বড়,ধনী-গরীব সকলে একত্রিত হয়ে ঈদের জামায়াতে নামাজা আদায় করেন। নামাজ শেষে একে অপরের সাথে কুশল বিনিময় এবং কোলাকুলি করেন। হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদের ব্যবস্থাপনা ছিল চমৎকার ও ঘুচানো। তাই হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসল্লীগণ দূর-দূরান্ত থেকে এসেও ঈদের জামায়াতে অংশগ্রহণ করে থাকে। অতীতের প্রেক্ষাপটে আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় প্রত্যেকটি জামায়াতে মুসল্লিদের উপচেপড়া ভীড় লক্ষ্য করা গেছে।
ধর্মমন্ত্রণালয় ও ইফার সকল নিদের্শনা অনুসরণ করে হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদে ঈদুল আযহার নামাজ আদায়ে বিশেষ ব্যবস্থাগ্রহণ করা হয়। প্রতিবারই সবদিক লক্ষ্য রেখে মসজিদ কর্তৃপক্ষ রুটিনমাফিক সুন্দর ও সুষ্ঠ পরিবেশ বজায় রাখতে সব রকম ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। এ মসজিদে প্রত্যন্ত অঞ্চলের সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, ডাক্তার,ইঞ্জিনিয়ার,শিক্ষক,ছাত্রসহ জেলার দুরদূরান্ত থেকে সকল পেশার মুসল্লিগণ ঈদের নামাজ আদায়ে ঐতিহাসিক হাজীগঞ্জ বড় জামে মসজিদে সমবেত হন। মুসল্লিদের সুন্দর ও সুষ্ঠভাবে নামাজ আদায় করতে প্রয়োজনে মসজিদের সম্মুখভাগ কাপড়ের দস্তর বিছানোর ব্যবস্থা করতে মসজিদ কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণে আন্তরিক ছিলেন।
গৃহীত ব্যবস্থার মধ্যে ছিল:প্রশাসনিক কর্মকর্তা,পৌর মেয়র,চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যানসহ অন্যান্য জনপ্রতিনিধি ও ব্যবসায়ী গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে আমন্ত্রণ জানানো,নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিত নিশ্চিতকরণ, নিয়ন্ত্রিত সাউন্ড সিস্টেম,মসজিদ সংলগ্ন এলাকা, মাদ্রাসার বারান্দায় নামাজ পড়ার উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি,পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ। হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদ কর্তৃপক্ষ ঈদের নামাজ আদায়ে মুসল্লিদের স্বার্থে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে আসছে।
মোতওয়াল্লী ও সমাজ বিজ্ঞানী প্রিন্স শাকিল আহমেদ বলেন,‘পর পর ৩টি জামাত আয়োজনে মসজিদ ব্যবস্থাপনার সব দিক গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় এনে ব্যবস্থাগ্রহণ করা হয়। লোডশেডিং এর বিষয়টি বিবেচনা করে মসজিদের ভেতর উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন সোল্ারের মাধ্যমে দু’শতাধিক সিলিং ও রি-মোভিং ফ্যান চালু রাখতে নির্দেশ রয়েছে। ওযু ও পানির ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ ও পরিস্কার-পরিচ্ছনতা বজায় রাখতে প্রায় শতাধিক কর্মচারীদের প্রতি রুটিন মাফিক দায়িত্ব-কর্তব্য পালনের নিদের্শনা দেয়া হয়েছে।’
তিনি আরোও বলেন,‘হাজীগঞ্জের সর্ব পেশার মানুষ ও মুসল্লিগণ হাজীগঞ্জসহ বিভিন্ন দূর-দূরান্ত থেকে এসে ঈদুল আযহার পর পর অনুষ্ঠিত জামাতগুলোতে অংশগ্রহণ করায় মসজিদের গ্্রাউন্ডফ্লোর, ১ম তলা ও এর আঙ্গিনা সম্পূর্ণ পরিপূর্ণ হয়ে যায়। খুৎতবা শেষে মুসল্লিগণ অশ্রুসিক্ত নয়নে মোনাজাতে শরীক হয়ে মহান আল্লাহ তা’য়ালার নিকট অতীতের পাপ মোচনসহ দুনিয়া ও আখেরাতের সুখ ও শান্তি এবং দেশ ও জাতির সার্বিক কল্যাণ ও সমৃদ্ধি কামনা করে দোয়া করা হয়।
আবদুল গনি
১৮ জুন ২০২৪