Monday , 7 October 2024
arafat ===

আরাফাতের ময়দানের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল হাজ্জু আরাফাহ বা আরাফাই হজ।’ ঐতিহাসিক আরাফাতের ময়দানে ৯ জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করাই হলো হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা। আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত না হওয়ার কোনো কাজা ও কাফফারা নেই। পরবর্তী বছর আবারও আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হওয়ার মাধ্যমে হজ সম্পাদন করতে হয়। অন্যথায় হজ আদায় হবে না।

আরাফার দিন। ৯ জিলহজ মিনা থেকে ফজর নামাজ আদায় করে সম্ভব হলে গোসল করে অথবা ওজু করে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ধীরস্থিরভাবে লাব্বাইক ধ্বনির সঙ্গে আরাফার দিকে রওয়ানা হতে হবে এবং সূর্যাস্ত পর্যন্ত এখানে অবস্থান করতে হবে। তাই জাবালে রহমত থেকে শুরু করে মসজিদে নামিরাসহ আরাফার ময়দানের চিহ্নিত সীমানার মধ্যে যে কোনো সুবিধামত স্থানে অবস্থান গ্রহণ করা।

ওকুফে আরাফা বা আরাফার ময়দানে অবস্থানের প্রধান কারণ হলো, বান্দাকে এ কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া যে, সৃষ্টির সূচনায় এই উপত্যকায় প্রথম ‘আহদে আলাস্তু’র শপথ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। কী সেই শপথ? সেদিন আল্লাহ তাআলা আদমের পিঠ থেকে কেয়ামত পর্যন্ত আগত সব বনি আদমকে পিপীলিকার অবয়বে সৃষ্টি করে তাদের জিজ্ঞাসা করেছিলেন- ‘আলাসতু বিরাব্বিকুম অর্থাৎ আমি কি তোমাদের প্রভু নই? উত্তরে সেদিন সব বনি আদমই (পিপীলিকার অবয়বে সব সৃষ্ট) বলেছিল, ‘হ্যাঁ’।’ (মুসনাদে আহমদ, মিশকাত)

যখন তোমার প্রতিপালক আদম সন্তানের পৃষ্ঠদেশ থেকে তাদের সন্তান-সন্তুতি বাহির করেন এবং তাদের নিজেদের সম্বন্ধে স্বীকারোক্তি গ্রহণ করেন এবং বলেন, ‘আমি কি তোমাদের প্রতিপালক নই?’ তারা বলে, ‘নিশ্চয়ই; আমরা স্বাক্ষী রইলাম। (এ স্বীকৃতি গ্রহণ) এ জন্য যে, তোমরা যেন কেয়ামতের দিন না বল, আমরা তো এ বিষয়ে জানতাম না।’ (সুরা আরাফ

আরাফাতের ময়দানে পৌঁছে হৃদয় দিয়ে সে ইতিহাস স্মরণ করা বা স্মৃতিচারণ করা জরুরি যে, ‘এ ময়দানেই একদিন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের থেকে তাকে প্রভু হিসেবে মেনে নেওয়ার স্বীকৃতি গ্রহণ করেছিলেন। আর আমরা তাকে প্রভু হিসেবে স্বীকার করেছিলাম।

সুতরাং আজকের এ দিনে আমরা প্রভুর গোলাম হতে চাই। শয়তানের দাসত্ব থেকে বেরিয়ে এসে জীবনের সার্বিক দায়িত্ব-কর্তব্য সব কিছুই প্রভুর কাছে ন্যস্ত করতে চাই।

এ দৃঢ় সংকল্প নিয়ে আরাফাতের ময়দানে অবস্থান কালে তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনার সঙ্গে তার তাসবিহ-তাহলিল, তাকবির ও দোয়া-দরূদের মাধ্যমে নিয়োজিত থাকা।

কেবলামুখী হয়ে আল্লাহর কাছে দু’হাত তুলে কায়মনোচিত্তে ক্ষমা প্রার্থনা করা। আল্লাহ তাআলা যেন তাদেরকে ক্ষমা করে দেন। জাহান্নাম থেকে মুক্ত করেন।

কেননা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আরাফার দিন আল্লাহ তাআলা সর্বাধিক সংখ্যক বান্দাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করে থাকেন এবং তার নিকটবর্তী হন ও ফেরেশতাদের কাছে গৌর্ব করে বলেন, দেখ ওরা কি চায়? (মুসলিম)

অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘তিনি নিম্ন আকাশে নেমে আসেন ও ফেরেশতাদের বলেন, তোমরা সাক্ষী থাক আমি ওদের সবাইকে ক্ষমা করে দিলাম।’ মুসনাদে বাযযার, তাবারানি, তারগিব)

তাই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘শ্রেষ্ঠ দোয়া হলো আরাফার দোয়া। তাই আল্লাহ তাআলার সেই ঐতিহাসিক স্বীকৃতির কথা স্মরণ করে তার কাছে দোয়া-দরূদ ও ইসতেগফারে নিয়োজিত থাকা জরুরি।

আরাফাতের ময়দানে করণীয়

সারাবিশ্ব থেকে আগত আল্লাহর মেহমানরা আরাফাতের ময়দানের বিশ্ব মুসলিম সম্মিলনে একত্রিত হয়। এ দিনে আল্লাহ তাআলা সবচেয়ে বেশি মানুষের গুনাহ ক্ষমা করে নিষ্পাপ করে দেন। এ দিন ও হজ সম্পর্কে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আলহাজ্জু আরাফাহ’ অর্থাৎ আরাফাই হজ। ৯ জিলহজ হজযাত্রীদের জন্য রয়েছে কিছু করণীয়। তাহলো-

১. এ দিন ফজরের নামাজের পর যে যেখানে থাকবে সেখানে থাকা অবস্থায়ই তাকবিরে তাশরিক পড়বেন। তাকবিরে তাশরিক ১৩ জিলহজ আসর পর্যন্ত পড়া ওয়াজিব।

৩. জিলহজের ৯ তারিখ সূর্য ওঠার পর তাকবিরে তাশরিক, তালবিয়া, দোয়া এবং তাসবিহ-তাকবির পড়তে পড়তে আরাফাতের ময়দানের দিকে রওয়ানা হওয়া।

৪. অবশ্যই জোহরের আগে আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হওয়া।

৫. আরাফাতের ময়দানে জাবালে রহমতের কাছাকাছি অবস্থান করা উত্তম।

৬. জোহর ও আসরের নামাজ আরাফাতের ময়দান সংলগ্ন মসজিদে নামিরায় এক সঙ্গে জামাতে নিদিষ্ট শর্তানুসারে আদায় করা উত্তম।

৭. মসজিদে নামিরায় অনুষ্ঠিত জামাতে শরিক হতে না পারলে নিজ নিজ তাবুতে যথাসময়ে জোহর ও আসর নামাজ পড়ে নেওয়া।

৮. মসজিদে নামিরার দক্ষিণ দিকে অবস্থিত ‘বতনে উরানায়’ অবস্থান করা যাবে না।

৯. আরাফাতের ময়দানে অবস্থানকালীন সময়ে তাওবা-ইসতেগফার, তাসবিহ-তাহলিল-তাকবির ও দোয়ার মাধ্যমে সময় অতিবাহিত করা। কেননা আরাফাতের ময়দানের দোয়াই আল্লাহ তাআলা সবচেয়ে বেশি কবুল করেন।

১০. দুপুরের আগেই সম্ভব হলে আরাফাতের ময়দানে গোসল করে নেওয়া। অন্যথায় ওজু করে নেওয়া।

১১. হজের খুতবা মনোযোগ সহকারে শোনা।

১২. সূর্য ডোবা পর্যন্ত আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা। তবে কেউ যদি সূর্য ডোবার আগে আরাফাতের ময়দান থেকে বের হয়ে যায়, তবে তার কর্তব্য হলো তিনি পুনরায় আরাফাতের ময়দানে ফিরে আসবেন এবং সূর্য ডোবার পর আরাফাতের ময়দান ত্যাগ করবেন। ফিরে না আসলে ওই ব্যক্তি জন্য দম বা কোরবানি আবশ্যক হয়ে যাবে।

১৩. আসর থেকে মাগরিব পর্যন্ত সময়ে বেশি বেশি তাওবা-ইসতেগফার ও দোয়া করা।

১৪. সূর্য ডোবার পরপরই মাগরিব না পরেই মুজদালিফার উদ্দেশ্যে তালবিয়া পড়তে পড়তে আরাফাতের ময়দান ত্যাগ করা।

১৫. আরাফাতের ময়দান ত্যাগ করার সময় মুজদালিফায় না পৌছে রাস্তায় মাগরিবের নামাজ পড়া যাবে না। মুজদালিফায় পৌঁছে এক আজান ও আলাদা আলাদা ইক্বামতে মাগরিব ও ইশার নামাজ আদায় করা।

১৬. যদি কেউ আরাফাতের ময়দান কিংবা পথে মাগরিবের নামাজ আদায় করে তবে ওই ব্যক্তির জন্য মুজদালিফায় গিয়ে পুনরায় মাগরিবের নামাজ আদায় করা ওয়াজিব।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কোরআন-সুন্নায় ঘোষিত নির্দেশনা মোতাবেক আরাফার দিনে দোয়া-দরূদ ও তাওবা-ইসতেগফার করার তাওফিক দান করুন। হজে মাবরুর দান করুন। আমিন।

13 .6 . 2024
এজি

এছাড়াও দেখুন

hajj--

হজের প্রাক-নিবন্ধন শুরু সোমবার

আগামী বছরের হজের প্রাক-নিবন্ধন আগামীকাল সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে। আজ রোববার ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *