৫ জুন বিশ্ব পারিবেশ দিবস। আমাদের পরিবেশ ও জীব-বৈচিত্র্য জীবনের সাথে ওতপ্রতভাবে জড়িত। প্রতিবছরই বিশ্ব পরিবেশ দিবসটি বিভিন্ন কর্মসূরি মাধ্যমে পালিত হয়ে আসছে। কিন্ত এ বছরও মরণঘাতী করোনার জন্যে পরিবেশ বিভাগ তেমন কোনো কর্মসূচি নেয় নি বলে জানা গেছে । তবুও আমাদের পরিবেশ,মৎস্য ও জীব-বৈচিত্র্য রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ এখন জরুরি। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় হলো :‘পরিবেশ পুনরুদ্ধার,হোক সবার অঙ্গীকার’।
কৃষি ও পরিবেশবিদদের মতে,‘একটি দেশের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ও সঠিক উন্নয়নে সে দেশের ২৫% বন ভূমি থাকা আবশ্যক। আমাদের দেশে বিশেষ করে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী,সকল প্রকার স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা,প্রাথমিক স্কুলের মাঠ বা আঙিনা এবং প্রবাসীদের নতুন নতুন বাড়িগুলোতে বিভিন্ন প্রকার ফল বৃক্ষের সমারোহ দেখা যায়। অথচ আশি’র দশক থেকেই আমাদের দেশে ব্যাপক গণসচেতনা বৃদ্ধি পাওয়া সত্বেও ১৭% এসে দাঁড়িয়েছে।
দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ও পরিবেশ সুরক্ষায় বনজ সম্পদ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। জাতীয় আয়ের ৫% আসে বনজ সম্পদ থেকে। মানুষের দৈনন্দিন জিনিস গুলোর মধ্যে ফলমূল,খাদ্য,জ্বালানি বাঁশ,বেত,হোগলা,মুরতা,ঘাস,মধু, মোম,পশুপাখি,চামড়া,ভেজষ ইত্যাদি। ঘরবাড়ি,আসবাবপত্র তৈরির প্রধান উৎসই বনজ সম্পদ। ফলে বনজ সম্পদের ব্যাপক অর্থনৈতিক অবদান রয়েছে। বেঁচে থাকার জন্যে যে মূল্যবান অক্সিজেন প্রয়োজন তা বৃক্ষ থেকেই আসে।
ইন্ডিয়ান ফরেস্ট রিচার্স ইন্সিটিটিউটের গবেষণার এক প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, ৫০ বছর টিকে থাকা একটি গাছ মানব সমাজকে বিশাল আর্থিক সুবিধা দিয়ে থাকে। বায়ূদূষণ থেকে পরিবেশকে রক্ষা করে ১০ লাখ টাকার,জীবনরক্ষাকারী মানুষকে অক্সিজেন দেয় ৫ লাখ টাকার, বৃষ্টির অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে কৃষি কাজে ৫ লাখ টাকার উপকার করে থাকে ।
প্রতিবছর বজ্রপাতে নতুন সমস্যা সৃষ্টি করে শত মত মানুষ বজ্রাঘাতে প্রাণ হ্ারাচ্ছে। এ থেকে প্রাথমিকভাবে পরিত্রাণ পেতে আমাদের প্রতিবছরই তাল গাছ , নারকেল গাছ ও খেজুর গাছ রোপন করতে হবে বলে কৃষিবিদগণ বলেছেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও প্রতিবছর তাল গাছ রোপনের ওপর জোর দিয়ে বক্তব্য রেখেছেন দু’বছর আগেই। আর এটি কোনো কঠিন কাজ নয় ।
প্রতিবছর স্বুল ও কলেজের ছাত্র-ছাত্রীগণ দিয়ে ও ইউনিয়ন পরিষদের মহিলা ও পুরুষ পুলিশ ,আনসার বিডিপি সদস্য ও প্রাথমিক স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীগণের মাধ্যমে এবং প্রত্যেকের স্ব- উদ্যোগে মৌসুমে তালের বীজ স্ব স্ব বাড়ি থেকে এনে বা তাদের বাড়িতেই স্ব-উদ্যোগে রোপন করলে দেশ ও জাতির উপকার হবে। দেশ প্রেমের উদ্দীপনায় তারা উদ্ভাসিত হবে।
মাটির ক্ষয়রোধ ও উর্বরাশক্তি বাড়ায় ৫ লাখ টাকার,গাছে বসবাসকারী পশু-পাখিকে খাদ্য দান করে বাঁচিয়ে রাখে ৫ লাখ টাকার, আসবাবপত্র,জ্বালানিসহ ফল দেয় ৫ লাখ টাকার এবং বিভিন্ন জীব-জন্তুর খাদ্য যোগান দেয় ৪০ হাজার টাকার। বাঁচার জন্যে যে অক্সিজেন প্রয়োজন তা গাছই আমাদের দিয়ে থাকে। তাই অক্সিজেন উৎপাদনেও বৃক্ষরোপণের প্রয়োজনীয়তা বর্ণানাতীত।
বাংলাদেশ বিশ্বে একটি নদীমাতৃক ও কৃষিনির্ভর দেশ। আবহমান কাল থেকেই নদ-নদীর সাথে আমাদের জীবনধারা বৈশিষ্ট্য ওতপ্রোতভাবে জড়িত। পরিবেশবিদদের মতে, জীববৈচিত্র ধ্বংসের ক্ষেত্রে নদীর মূমুর্ষতাও একটি বড় কারণ। অপরিকল্পিতভাবে নদীতে বাঁধ দেয়া ও দূষণের মাধ্যমে এদেশের অসংখ্য নদী ধুঁকে ধুঁকে মরে যাচ্ছে। ফারাক্কাই তো এর উদাহরণ। এক সময়ে বাংলাদেশে দেড় হাজারের মতো নদী ছিল।
ঢাকার বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যাসহ আশ–পাশের নদ-নদীগুলির অবস্থা করুণ। বুড়িগঙ্গার দূষিত পানি চাঁদপুরের ষাট নল পর্যন্ত এসে গেছে ।
বুড়িগঙ্গার দুষিত ও দুর্গন্ধ্যময় পানি আজ এ মিঠা পানির সাথে মিশে দূষিত হয়ে যাচ্ছে । ফলে পৃথিবীর বিখ্যাত ইলিশ মাছ মেঘনা ছেড়ে পালাবে। এর সাথে অন্যান্য সু-স্বাদু মাছ ও প্রাণিজ সম্পদ হারাতে হবে। এর পানি কৃষি কাজে ব্যবহার অযোগ্য বলে বিবেচ্য হবে। অথচ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মিঠা পানির নদী গুলোর মধ্যে হচেছ মেঘনা নদীর পানি ।
।
এ দিকে ভারত যদি টিঁপাইমুখ বাঁধ বেঁধে ফেলে তাহলে মেঘনা নদীর অস্থিত্ব থাকবে না । ইলিশ সহ সকল প্রকার মৎস্য সম্পদ ধ্বংস হয়ে যাবে । কৃষি ও জীব বৈচিত্র্যও হুমকির মুখে পতিত হবে। দখলজনিত কারণে দেশের ১৫৮টি নদী এখন রুগ্ন হয়ে পড়েছে। ১৭টি নদী একেবারেই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। অন্তত: ৮টির অবস্থা এখন বিলুপ্তির পথে।
সারা দেশে এখন মাত্র শ’খানেক নদী আছে যেগুলো দিয়ে নৌ-চলাচল করছে। প্রাণিজ সম্পদ ও কৃষিপণ্য আমাদের স্বনির্ভতার প্রতীক। এ দেশের নদ-নদীতে প্রচুর মৎস্য সম্পদে ভরপুর। পাশাপাশি নদী বিধৌত ও নদীতীরবর্তী অঞ্চলগুলোতে প্রচুর কৃষিপণ্য উৎপাদনে আমাদের বেঁচে থাকার অবলম্বনও। কৃষির পাশাপাশি রয়েছে আমাদের গবাদি পশু,হাঁস-মুরগি,ছাগল,ভেড়া,মহিষ ও অন্যান্য প্রাণী । যা আমাদের জীবন ধারণের অন্যতম মাধ্যম।
গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে কৃষাণ-কৃষাণীরা গরু,ছাগল,ভেড়া ও অন্যান্য প্রাণী প্রতিপালন করে থাকেন। এতে একদিকে তাদের আয় রোজগার বাড়ছে অন্যদিকে আমাদের আমিষের যোগান হচ্ছে। নদ-নদীর মধ্যে রয়েছে বিশ্ব খ্যাত ইলিশ। বাংলাদেশ পৃথিবীর নদ নদীর দেশগুলোর মধ্যে সপÍম। এদেশের নদ-নদীতে বহু প্রজাতির মাছ রয়েছে। এর মধ্যে ইলিশের অবস্থান সর্বশীষে। ইলিশ আমাদের দেশের নদ-নদী ও সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার মতে, বিশ্বে মিঠা পানি মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান ৪র্থ। বাংলাদেশের মাছ প্রধানত দু’ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। এর একটি হলো লোনা পানির মাছ আর একটি হলো মিঠা পানির মাছ । দেশের জাতীয় মাছ হলো ইলিশ। আর্ন্তজাতিক সংস্থা ওয়ার্ড ফিসের সাম্প্রতিক তথ্য মতে, ইলিশ রয়েছে বিশ্বের ১১ টি দেশে। এর মধ্যে ১০ টিতেই দিন দিন ইলিশের উৎপাদন কমছে। অথচ বাড়ছে বাংলাদেশ।
বিশ্বের ৬৫% ভাগ ইলিশ বাংলাদেশেই উৎপাদন হয়। ইলিশ সাগরে বসবাস করে । কিন্তু প্রাকৃতিক নিয়মেই বংশ বিস্তার করার জন্যে প্রায় ১২ শ’কি.মি.পর্যন্ত অতিক্রম করে আমাদের দেশের মিঠা পানিতে প্রবেশ করে।
ইলিশ গবেষকদের মতে, ১টি মা ইলিশ একসঙ্গে প্রায় ২০ লাখ পর্যন্ত ডিম ছাড়ে। যার ১৮ % ভাগই ইলিশের রেণুতে পরিণত হয়। ইলিশ ছাড়াও পোঁয়া,রূপচাঁদা, ভেটকি,বাইলা প্রভৃিত সাগরের মাছ রয়েছে। দেশে গড়ে প্রতি বছর ৩ লাখ ৪৬ হাজার মে.টন ইলিশ উৎপাদিত হয়। যার বর্তমান বাজার মূল্য ১০ হাজার কোটি টাকা ।
চলতি বছর এর লক্ষ্যমাত্রা হলো পৌনে ৬ লাখ মে.টন। আমাদের জাতীয় জেডিপিতে ইলিশের অবদান ১২ %। আমাদের প্রতি বছর ইলিশ মাছ রপ্তানি করে ২শ’৫০ থেকে ৩শ’ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হয়। মাছ রপ্তানির আরেকটি খাত হলো চিংড়ি ।
বাংলাদেশে ৬৫ প্রকারের চিংড়ির প্রজাতি রয়েছে। বিশ্বব্যাপি দিন দিন চিংড়ি মাছের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে । দেশে প্রায় ২ লাখ ৭৬ হাজার হেক্টর নদীতীরবর্তী জমিতে চিংড়ির চাষ হয়ে থাকে। প্রতি বছর উৎপাদিত চিংড়ির গড়ে ৫০ হাজার মে.টন রপ্তানি হয়। এ দেশে আমরা এক বলি ‘সাদা সোনা’। মিঠা পানির মাছ চাষে গত এক যুগ ধরে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বের শীর্ষ ৫ টি দেশের মধ্যে একটি । সমুদ্রের মাছ আহরণের দিক বাংলাদেশের অবস্থান ২০তম।
পৃথিবীর প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হলো আমাদের দেশের চট্রগ্রামের হালদা নদী। এর দৈর্ঘ্য ৮১ কি.মি.। ২৯ কি.মি.অংশে সারা বছর নৌকা চলাচল করে। ফলে জোয়ার-ভাটায় রুই জাতীয় মাছ ডিম ছাড়ে । ‘পুকুর ভরা মাছ,আর গোলা ভরা ধান’-বাংলাদেশের বাঙালির চিরায়ত বৈশিষ্ট্য। বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষের পুষ্টি গুণ পেয়ে থাকে মাছে। মাছে আছে ক্যালসিয়াম,ফসফরাস,প্রোটিন,স্নেহ ছাড়াও আরো অন্যান্য ভিটামিন।
মিঠা পানির মাছের মধ্যে রয়েছে কৈ,রুই,কাতলা,মাগুর,শিং,আইড়,চিতল,বোয়াল,সৌল,
পুটি,কালিবাউ,বাইন,পাবদা,গজার টেংরা,ঢেলা,মলা,মৃগেল,খলিসা,ভাগনা,বাতাশি,কাইকা,
ঘনিয়া,বাইলা,চান্দা,খইলা,চাপিলা,রিটা, নন্দিনা,তেলাপিয়া,নাইলোটিকা, গ্রাসকাপ প্রভৃতি। 21
আমাদের নদ-নদী,পুকুর,জলাশয়,খাল,বিল,ঝিল,হাওড়, বাওড় ও চরে প্রচুর পরিমাণে এসব মাছ প্রাকৃতিকভাবেই উৎপাদিত হয়ে থাকে। বর্তমানে এ জাতীয় অনেক মাছ এখন চাষাবাদ করা হয়। আমাদের দেশের অভ্যন্তরে যে প্রকারের মাছ পাওয়া যায় পৃথিবীর অনেক বড় দেশে এসব মাছই নেই ।
পৃথিবীর অন্যতম মিঠা পানির নদী মেঘনা। আমাদের এ মেঘনা একদিকে এর তলদেশ ভরাট হচ্ছে অপর দিকে পানি দূষিত হতে চলছে। এভাবে ক্রমাগত ভাবে চলতে থাকলে আমাদের জাতীয় সম্পদ ইলিশসহ সকল প্রকার মিঠা পানির মাছ আ্র থাকবে না। ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার শিল্প কল কারখানার বর্জ্য মাছের জীবনকে বিপন্ন করে তুলছে। বুড়িগঙ্গা আর শীতলক্ষ্যার দূষিত পানি মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া পেরিয়ে চাঁদপুরের নৌ-সীমানার ষাটনল পর্যন্ত প্রবেশ করে ফেলছে।
চাঁদপুরের উত্তর সীমানায় মতলবের ষাটনল পর্যন্ত ঢাকার বুড়িগঙ্গার দূষিত পানি ও নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর এ দুর্গন্ধময়,দূষিত ও আর্বজনাযুক্ত পানি মেঘনায় প্রবেশ করা শুরু করছে । যা পরিবেশ বিপর্যয় ও আমাদের মাছের করুণ পরিণতি বয়ে আনবে। এখনই সংশ্লিষ্ট বিভাগের মেঘনা , মেঘনার পানি ও মেঘনার দু’পাড়ের কৃষি ,জীব বৈচিত্র্য,মৎস্য, ইলিশ সম্পদ,জলজ সম্পদ নিয়ে ভাবতে হবে। পাশাপাশি ভাবতে হবে এর কৃষি সম্পদের অবদানের কথা।
মৎস্য বিজ্ঞানী ও ইলিশ গবেষকদের মতে,অভ্যন্তরীণ জলাশয়ের পরিবেশগত পরিবর্তনের ফলে বিশেষ করে বিভিন্ন নদ-নদীতে বাঁধ ও ব্রিজের কারণে এবং উজান থেকে পরিবাহিত পলি নদীর তলদেশে জমার জন্যে পানি প্রবাহ কমে যায় এবং জলজ পরিবেশ দূষিত হয়ে পড়ে। চর পড়ে নদী নাব্যতা হারাচ্ছে। দেশের দক্ষিণ্ঞ্চালের নৌ-পথ কমে যাচ্ছে ।
একটি ভয়ানক পরিস্থিতি বয়ে আনবে ভারত যদি তুলপাই নামক স্থানে ‘ টিপাইমুখ বাঁ’ধ একেবারেই দিয়ে ফেলে তাহলে মেঘনা আর মেঘনা নদী থাকবে না। মেঘনার সব বিচিত্র্য ও মৎস্যসম্পদ বিলীন হয়ে যাবে। পরিবেশের ওপর পড়বে আমাদের নানা নেতিবাচক পরিস্থিতি । কী করা প্রয়োজন-এর ভাবনা এখনই ভাবতে হবে।
জলবায়ূর পরিবর্তনের কারণে ইলিশের পরিভ্রমণ, প্রজনন ক্ষেত্র এবং বিচরণ ও চারণ ক্ষেত্র দিন দিন পরিবর্তিত ও বিনষ্ট হচ্ছে। এতে উৎপাদনও কমে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। নির্বিচারে কম ব্যাসের ক্ষতিকর জাল ও সরঞ্জামাদি দিয়ে জাটকা ও মা ইলিশ আহরণও উৎপাদন কমে যাওয়ার আরো একটি বড় কারণ।
সর্বোপরি ঢাকার বুড়িগঙ্গার কুচকুচে কালো পানি দেশের দক্ষিণ্ঞ্চালের প্রাকৃতিক সম্পদ ইলিশসহ সকল প্রকার প্রাণিজ সম্পদ ও জীব-বৈচিত্রের ওপর একটি বড় ধরণের হুমকি এ দুর্গন্ধময়, দূষণযুক্ত ও আর্বজনাযুক্ত পানি ।
এ ব্যাপারে চাঁদপুর নদী গবেষণা কেন্দ্রের ইলিশ গবেষক ড.আনিছুর রহমান জানান, দেশের বিরূপ জলবায়ূ নিয়ে আমরা ইতোমধ্যেই কাজ করে যাচ্ছি। এর মধ্যে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার শিল্প কল কারখানার বর্জ্য পানির সাথে দূষিত পানি যে জীব-বৈচিত্র্যেকে বিপন্ন করে তুলছে-সে বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে ও এ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা চলছে।
মেঘনা আমাদের শুধুই মাছ সম্পদ দিচ্ছে না। জীব-বৈচিত্র্যে রক্ষার প্রধান বাহন এ মেঘনা নদী। এর দু’পাশের তীরবর্তী এলাকায় পলল মাটির কারণে কৃষি ফসল ,কৃষিপণ্য উৎপাদন ও পরিবহনেও অন্যতম ভূমিকা পালন করছে ।
মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সাংবাদিকদের এক সময় বলেছেন,‘খাদ্য মন্ত্রণালয়ে ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যৌথ জাতীয় খাদ্য গ্রহণ নিদের্শিকা অনুযায়ী একজন মানুষের দিনে অন্তত: ৬০ গ্রাম মাছ খাওয়া প্রয়োজন । একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের প্রতিদিন ১,১২০ গ্রাম মাংসের প্রয়োজন। দেশে বর্তমান দৈনিক মাথাপিছু গোশতের প্রাপ্যতার ১২১.৭৪ গ্রাম,যা চাহিদার তুলনায় বেশি।’এটা আমাদের আশার কথা । কিন্ত এর নেতিবাচক দিক নিয়ে কাজ করতে হবে।
মৎস্য অধিদপ্তরের প্রতিবেদন অনুযায়ী,২০১৬-১৭ সালে মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪০ লাখ ৫৫ হাজার মে.টন। উৎপাদন হয়েছে ৪১ লাখ ৩৪ হাজার মে.টন। যা ২০০৮-০৯ অর্থ বছরের থেকে ৫৩ শতাংশ বেশি। আমাদের জনপ্রতি প্রতিদিন মাছের চাহিদা ৪৮ গ্রাম। বর্তমানে বেড়েছে ৫৫ গ্রাম। বছরে জনপ্রতি চাহিদা ২১ কেজি ৯০ গ্রাম । গ্রহণ করছে ১৯ কেজি ৩০ গ্রাম।
২০০৪ সালে মাছের উৎপাদন ৫৭ ভাগ ছিলো। ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে আরো ১১ % বেড়েছে । ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ৭১ লাখ ৩৫ হাজর মে.টন গোশত উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৭১ লাখ ৩৫ হাজার মে.টন উৎপাদন হয়েছে।
জাতিসংঘ খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ২০১৬ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ জলাশয় থেকে মৎস্য আহরণে বিশ্বে চতুর্থ এবং মাছ চাষে পঞ্চম স্থানে রয়েছে। কর্মসংস্থানেও মৎস্য সেক্টর অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে।
২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ১ কোটি ৮২ লাখ লোখ পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে মৎস্য সেক্টরে জীবিকা নির্বাহ করে চলছে। সুতরাং মাছ ও গোশতের স্বয়ংসম্পূর্ণতা বজায় রাখতে দেশের কৃষি ও মৎস্য খাতকে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা আবশ্যক ।
মাছের অতীত ঐতিহ্য ও আমাদের দেহ সুস্থ রাখতে পরিবেশ বিপর্যয় ঠেকাতে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে দেশের সকল বিশেষজ্ঞ,আনবিক শক্তি কমিশন ও মৎস্য বিজ্ঞানীদের মতামতের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি হয়ে পড়েছে। (তথ্যসূত্র : জাতীয় দৈনিক )
লেখক পরিচিতি :আবদুল গনি, শিক্ষক, প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক , চাঁদপুর। ৩ জুন ২০২৪ ।