মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর।হাজীগঞ্জ বাজারে ঈদের কেনাকাটা জমে উঠেছে। পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে চাঁদপুর জেলার প্রাণকেন্দ্র হাজীগঞ্জ বাজারে ছোট-বড় সবার পছন্দের নানারকম,বাহারি রঙ্গের নতুন বস্ত্র কেনা-বেচায় ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন ব্যবসায়ীবৃন্দ।
বিশেষ করে বিজনেস পার্ক মকিমউদ্দিন সপিং সেন্টার, হাজীগঞ্জ বাজার বিশাল সপিং সেন্টার, ঐতিহ্যবাহী কাপড়িয়া পট্টি (বণিকপট্টি),হাজীগঞ্জ প্লাজা, হাজীগঞ্জ টাওয়ার, আহমেদ প্লাজা, ফুলেল সুপার মার্কেট,কিউসি টাওয়ার, আল-আমিন মার্কেট সহ বাজারের সর্বত্রই চলছে জমজমাট ঈদ উৎসব। মকিমউদ্দিন শপিং সেন্টার পুরোটাই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় ক্রেতাদের প্রচন্ড ভীড় লক্ষ্য করা গেছে ।
এছাড়াও রামপুর বাজার গাউছিয়া মার্কেটসহ গ্রামীণ-হাট-বাজারে ঈদের বেচা-কেনা চলছে রমরমা।
সরজমিন গিয়ে হাজীগঞ্জ বাজারে ক্রেতাসাধারণের সাথে এ বিষয় জানতে চাইলে তারা বলেন, নতুন পোষাকের আনন্দটাই ব্যতিক্রম।আমরা নিরাপদে শপিং করছি। তবে পোষাকের মূল্য আগের চেয়ে অনেক বেশি। দোকানীরা কাপেেড়র মূল্যের বিষয়ে বলেন, এবার কাপেেড়র দাম আগের চেয়ে বেশি দামে কিনেছি। আর এ ঈদকে সামনে রেখে বাহারি ডিজাইনের পোশাকে সাজানো হয়েছে হাজীগঞ্জের বিপনি বিতানগুলো। বিপনি বিতান গুলোতে ক্রমেই বাড়ছে ক্রেতা সমাগম।
বিক্রেতারা বলছেন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে ক্রেতা থাকলেও বিক্রি কম। ক্রেতারা বলছেন-অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর পোশাকের দাম অনেকটাই বেশি। তারপরও পরিবারের ঈদ আনন্দের কথা ভেবে কিনতেই হচ্ছে। অন্যদিকে আইন-শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে মাঠে কাজ করছে পুলিশ প্রশাসন।
ঈদকে সামনে রেখে পাঞ্জাবি, শার্ট-প্যান্ট, থ্রি পিস,শাড়িসহ বাচ্চাদের নতুন সব জামা কাপড় দিয়ে দোকান সাজিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। যদিও গতবছরের তুলনায় এ বছর দামবৃদ্ধি থাকায় পোশাক বিক্রিতে ভাটা পড়েছে।ঈদ উপলক্ষে জমজমাট হাজীগঞ্জ বাজার ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে জমজমাট হয়ে উঠছে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের বিপনী বিতানগুলো। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলছে কেনাকাটা। মার্কেটে মার্কেটে পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরছেন অনেকেই।
ঈদ কাছে চলে আসায় সব শ্রেণি পেশার মানুষ ছুটছেন হাজীগঞ্জ বাজারে তাদের পছন্দের কেনাকাটা করতে। মার্কেটগুলোতে ক্রেতারা রেডিমেড পোশাকের প্রতিই বেশি ঝুঁকছেন বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। নারী, পুরুষ, শিশুসহ সকল বয়সীরা এখন কেনাকাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।
হাজীগঞ্জ বাজারের কয়েকটি মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে বিভিন্ন বিপণি-বিতানগুলোতে ততই ভিড় বাড়ছে। ক্রেতারা পছন্দমতো পোশাক কিনতে এক দোকান থেকে অন্য দোকানে ছুটছেন। এ ঈদে দোকানিরা ইন্ডিয়ান সারারা জর্জেট, ডায়মন্ড, বিনয়, কাঁচা-বাদাম, লাচ্ছা, বিবেগ, লংস্কার্ট,পাখি-লেহেঙ্গা, ঐশ্বরিয়ার ময়ূরী-ড্রেস আর পাকিস্তানি বাড়িস, খুবসুরত, পাকিস্তানি-কটি, শাহজাদি ইত্যাদি ডিজাইনের পোশাক এনেছেন।
এসব ডিজাইনের কাপড় রকম ভেদে ২ হাজার থেকে সাড়ে ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। আবার টেইলার্সের দোকানেও প্রচুর ভিড় লক্ষ করা গেছে। ঈদের বাকী দুই সাপ্তাহ এখন থেকে কাপড় বানানোর অর্ডার নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন টেইলার্স মালিকরা।
হাজীগঞ্জে বিজনেস পার্ক মার্কেটে ঈদবাজার করতে একজন মহিলা ক্রেতা জানান, এবার রোজার দু সাপ্তাহ শেষে শপিং করতে এসেছি। চলতি সপ্তাহে নিজের ও আত্মীয়স্বজনের জন্য শপিং শেষ করতে চাই। কারণ শেষদিকে অনেক ভিড় হবে। তবে কোনো কোনো দুৃকানীর ভালো ব্যবহারে মুগ্ধ ও খুশি ্ দাম এবেলা যাই চাকনা কেনো। ’
হাজীগঞ্জ রয়েল রওশন সুপার মার্কেটে ঈদবাজার করতে আসা আরেক ক্রেতা জানান, অন্য বছরের তুলনায় এ বছর ঈদে সব জিনিসপত্রের দাম বেশি। কিন্তু কি আর করার আছে। ঈদে কিছু কেনাকাটা করা দরকার, তাই মার্কেটে এসেছি।
হাজীগঞ্জ বাজারের ফুলেল সুপার মার্কেটের একজন শপিং মালিক জানান, ক্রেতারা নিত্য-নতুন ডিজাইনের পোশাক কিনছেন।
এ দোকানে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নিত্য-নতুন ডিজাইনের মেয়েদের সিল্ক, বেনারসি, টাঙ্গাইল প্রিন্ট, জামদানি ও কাতান শাড়িসহ থ্রি-পিস, লং-থ্রিপিস, সালোয়ার কামিজ, লেহেঙ্গা, ছিট-কাপড় গ্যাবাডিং-প্যান্ট, হাফ শাট, ফতুয়া ও পাঞ্জাবি বিক্রি হচ্ছে। ডিজাইন ও রকম ভেদে কাপড়গুলোর ৬শ থেকে ৯ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। তবে ঈদের শেষ মুহূর্তে বেচাকেনা অনেক ভালো হবে।
ঈদে অনেক দোকানেই ক্রেতা আকৃষ্ট করার জন্য মূল্য ছাড়ের কথা লেখা থাকে। কোন কোন ক্রেতা আসছেন পছন্দ করছেন, কিনে নিচ্ছেন পছন্দমত পোশাক। যদিও এবার গতবছরের তুলনায় দাম কিছুটা বেশি। ক্রেতারা পোশাকের দাম শুনে বিরক্ত হয়ে চলে যাচ্ছেন। মার্কেটে ক্রেতাদের ভিড় আছে, তবে তুলনামূলক বিক্রি কম। আশা করা যাচ্ছে ২-৩ দিনের মধ্যে পুরোদমে কেনাকাটা জমে উঠবে।
ঈদের ২-৩ দিন আগে মার্কেটে প্রচুর ভিড় হয়। তাই আগেভাগে চলে এসেছি। পছন্দের পোশাক কিনেছি, আরও কিনবো। দাম বেশি মনে হচ্ছে। দামের কারণে মার্কেটে বেশি সময় দিতে হচ্ছে। নিজের জন্য, পরিবারের জন্য কেনাকাটা করতে এসেছি। মনে হয় না একদিনেই হয়ে যাবে। লাগাম ছাড়া দাম। কোন নিয়ন্ত্রণ নেই মার্কেটে। প্রশাসনের মনিটরিং করা উচিত।
হাজীগঞ্জ রয়েল রওশন সুপার মার্কেটের জোনাকী শপিং সেন্টারের সত্ত্বাধিকারী প্রাণ কৃষ্ণা সাহা জানান, এবার রমজানের শুরু থেকেই বিক্রি বেড়েছে। আশা করছি, এ ঈদে বেচা-বিক্রি অনেক ভালো হবে।
বর্তমান উপজেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেক ভাল। জনগণের জান-মাল রক্ষার জন্য সব সময় সর্বোচ্চ চেষ্টাসহ নিরাপত্তা দেয়ার জন্যে পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে বলে জানা যায়। এ ঈদকে সামনে রেখে উপজেলার বিভিন্ন বিপণি-বিতান দোকান ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশ সব সময় টহল দিচ্ছে।
চাঁদপুর জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেছেন,‘ ঈদ এলেই বেড়ে যায় চুরি ছিনতাইসহ নানা অপরাধমূলক ঘটনা। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিতে পোশাকে এবং সাদা পোশাকে কাজ করছে পুলিশ। প্রত্যেক মার্কেটে এরইমধ্যে পুলিশ সদস্যের নিয়োজিত করা হয়েছে। এছাড়া পুলিশের টহল সার্বক্ষণিক থাকবে। কেউ কোনো কেউ অভিযোগ দিলে দ্রুতই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
কবির আহমেদ
৩ এপ্রিল ২০২৪
এজি