হরমোনজনিত রোগের ক্ষেত্রে ডায়াবেটিসের পরই থাইরয়েড রোগের অবস্থান। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে পাঁচ কোটির বেশি মানুষ এই রোগে ভুগছে। রোগটির প্রতিক্রিয়া ধীরে ধীরে হওয়ায় ৭৫ শতাংশ রোগীই রোগ সম্পর্কে জানতে পারে না বা চিকিৎসার আওতায় আসে না।
শুক্রবার ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে এন্ডোক্রাইনোলজিস্টদের সংগঠন থাইরয়েড টাস্কফোর্স ও বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য দেয়া হয়।
‘বিশ্ব থাইরয়েড দিবস’ উপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। দেশে প্রতিবছর সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে ২৫ মে বিশ্ব থাইরয়েড দিবস পালন করা হয়। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘থায়রয়েড রোগ, অসংক্রামক রোগ’।
সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ডা.শাহজাদা সেলিম।
সংবাদ সম্মেলনে বিশেষজ্ঞরা বলেন,আয়োডিনের ঘাটতি কিংবা আধিক্য,বিভিন্ন ভাইরাসের আক্রমণ,অটোইমিউন রোগ,বিভিন্ন ওষুধের প্রতিক্রিয়া, জন্মগত ত্রুটি,সন্তান ধারণ ও গর্ভ-পরবর্তী পরিস্থিতি থায়রয়েড রোগের অন্যতম কারণ। মোটা দাগে থাইরয়েডের সমস্যাগুলো হলো হরমোনের ঘাটতি বা হাইপো-থাইরয়েডিজম, হরমোনের আধিক্য বা হাইপার-থাইরয়েডিজম, প্রদাহ বা থাইরয়েডাইটিস, গলগণ্ড ও ক্যান্সার।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বয়স্ক নারীদের প্রায় ২ শতাংশ এবং পুরুষদের প্রায় ০.২ শতাংশ হাইপার-থাইরয়েডিজম রোগে ভোগে। হাইপো-থাইরয়েডিজমে আক্রান্ত ৩.৯ শতাংশ থেকে ৯.৫ শতাংশ।
প্রতি ১০ হাজার জীবিত নবজাতকের মধ্যে দু থেকে আটটি শিশুর হরমোন ঘাটতিজনিত সমস্যা রয়েছে। গলগণ্ড রোগীদের ৪.৫% থায়রয়েড ক্যান্সারের উচ্চ ঝুঁকিতে। দেশে ঠিক কতসংখ্যক মানুষ থাইরয়েড রোগে আক্রান্ত, এসংক্রান্ত সরকারি বা বেসরকারি কোনো পরিসংখ্যান না থাকায় বিশেষজ্ঞরা ভারতের পরিসংখ্যান অনুসরণ করছেন বলে জানান।
হাইপো-থাইরয়েডিজমের লক্ষণ
অবসাদগ্রস্ততা, ত্বক খসখসে হওয়া, ক্ষুধামন্দা,চুল পড়া,ওজন বাড়া,স্মৃতিশক্তি কমা, শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ না হওয়া,শীত শীত ভাব,কোষ্ঠকাঠিন্য, মেজাজ খিটখিটে হওয়া, রক্তচাপ বাড়া, মাসিকের সমস্যা ইত্যাদি। এ ছাড়া বন্ধ্যত্ব সমস্যা, গর্ভপাত হতে পারে।
থাইরয়েড ক্যান্সারের লক্ষণ : গলার সম্মুখভাগে ফুলে ওঠা। ফোলা অংশটি বেশ শক্ত হয়। গলায় এক বা একাধিক টিউমার হতে পারে। আশপাশের লিংক নোডগুলো ফুলে উঠতে পারে। ওজন কমে যায়।
বিএসএমএমইউয়ের সহকারী অধ্যাপক (এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ) ডা. মারুফা মোস্তারী কালের কণ্ঠকে বলেন, পুরুষদের তুলনায় নারীদের হাইপো-থাইরয়েড বা থাইরক্সিন ঘাটতির ঝুঁকি প্রায় আট গুণ। এ সমস্যার সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি থাকে প্রজননক্ষম বয়সে। অর্থাৎ কৈশোর থেকে শুরু করে মধ্যবয়স পর্যন্ত।
তিনি বলেন, নারীদের থাইরয়েডজনিত সমস্যার অন্যতম কারণ ‘অটোইমিউন’। অটোইমিউন রোগগুলো নারীদের বেশি হয়। কিশোরী বা অল্পবয়স্ক নারীর মাসিকের দীর্ঘসূত্রতা,মাসিকে অতিরিক্ত রক্তপাত,এর ফলে রক্তশূন্যতা ও ক্লান্তির মতো সমস্যাগুলো হয় মূলত হরমোনের একটা প্রভাব থেকে। এ ক্ষেত্রে দ্রুত শনাক্ত করে চিকিৎসা নিলে সুস্থতা সম্ভব। কিন্তু সমস্যা হলো, চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া বা পরীক্ষা করার বিষয়টি অনেকে প্রয়োজন মনে করেন না।
ডা.শাহজাদা সেলিম বলেন,থাইরয়েড রোগের ক্ষেত্রে আয়োডিনের ঘাটতি একটা বড় সমস্যা। আয়োডিনের ঘাটতি পূরণ করা গেলে থাইরয়েড সমস্যার সমাধান করা যাবে। আবার লবণে আয়োডিন ঠিকমতো মেশানো গেলে শুধু খাদ্যের লবণ দিয়েই এক থেকে দেড় কোটি মানুষকে নিরাপদ রাখা সম্ভব।
তিনি বলেন,সব বয়সের মানুষের স্ক্রিনিং,আয়োডিনের অভাব,ভেজাল খাদ্য ও আর্সেনিকযুক্ত পানি পান না করা এ রোগের প্রধান প্রতিরোধক বিষয়। এ ছাড়া সরকার খুব সহজে থাইরয়েডের বাধ্যতামূলক স্ক্রিনিং চালু করতে পারে।
২৫ মে ২০২৪
এজি