Monday , 9 September 2024
PM--

উপজেলা নির্বাচন ‘উন্মুক্ত’,কোনো সংঘাত চাই না : শেখ হাসিনা

আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ‘প্রার্থীতা উন্মুক্ত’ করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই নির্বাচনে অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের নিজ নিজ যোগ্যতা প্রমাণের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। তবে ওই নির্বাচনে যেন কোনো সংঘাত না হয় সে বিষয়েও সবাইকে সতর্ক করেছেন দলীয় প্রধান।

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের যেসব নেতারা প্রার্থী হতে চান তাদের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন,‘১৫ বছর ক্ষমতায় থেকে সাধারণ মানুষের জন্য কতটুকু কাজ করেছেন,কারা করতে পারেননি, সেটাও যাচাই-বাছাই হয়ে যাবে। জনগণের কাছে কার গ্রহণযোগ্যতা, সেটাই দেখব।’

তিনি আরও বলেন,‘কোনো রকম সংঘাত চাই না। যিনি এর সঙ্গে জড়িত থাকবেন,তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

শনিবার ১০ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের এক বিশেষ বর্ধিত সভায় শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বানচাল করতে নানা চক্রান্ত হয়েছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই নির্বাচনকে ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ করতে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র হয়েছে। এরপরও নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে বলে দাবি করেন সরকারপ্রধান।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়, তাদের সুস্পষ্টভাবে বলতে হবে, কী দেখে তারা বলছে যে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয় নাই। এটা তাদের বলতে হবে। সেটা বলছে না। কিন্তু তারা বলে যাচ্ছে, নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ হয় নাই।’

তিনি আরও বলেন,‘কিছু দেশীয়-আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে এ ধরনের কথা বলা হয়। যে দেশই বলুক,তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, কীভাবে,কোথায় সমস্যা, তাদের বলতে হবে।’

সভায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ছাড়াও উপদেষ্টা পরিষদ, জাতীয় পরিষদ, মহানগর, জেলা, উপজেলা ও পৌরসভার নেতা, দলীয় ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য, সিটি ও পৌর মেয়র, জেলা ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের পাশাপাশি সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকেরা উপস্থিত ছিলেন।

শনিবার সকাল থেকেই সারাদেশ থেকে আসা নেতারা গণভবনের সামনে জড়ো হতে শুরু করেন। সাড়ে আট থেকে এক এক করে নেতারা গণভবনে প্রবেশ শুরু করেন।

বিশেষ বর্ধিত সভাকে জাতীয় নির্বাচনের পরে মিলনমেলা বলে উল্লেখ করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।

সভায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র, নির্বাচন পরবর্তী দলীয় কোন্দল নিরসন, আগামী উপজেলা নির্বাচন, দ্রব্যমূল্য কমানোর বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী।

উপজেলা পরিষদসহ স্থানীয় সরকারের অন্য নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হওয়ার আইনি বিধান আছে। এ ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দল থেকে কেই মনোনয়ন পেলে তিনি ওই দলের দলীয় প্রতীক নিয়ে ভোট করেন। তার বিরুদ্ধে আবার দলের অন্য নেতা স্বতন্ত্র নির্বাচনে অংশ নেন, যাকে ‘বিদ্রোহী’ তকমা দেয়া হয়। বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারিও দেয়া হয়।

এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নৌকা ও দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছিল। নৌকার বিরুদ্ধে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচন করেছেন। অনেকে বিজয়ীও হয়েছেন। তবে এবার তাদের বিদ্রোহী বলা হয়নি।

এর কারণ হিসেবে শনিবার বিশেষ বর্ধিত সভায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বানচালের জন্য অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছিল। প্রার্থিতা উন্মুক্ত না থাকলে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার পাশাপাশি বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে হরণ করা হতো। বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদার অর্জন নস্যাৎ হয়ে যেত।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশে নির্বাচন হয়েছে, সেটা এখনও তাদের বিরোধীদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। এমনকি নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতায় খুনোখুনি হয়ে গেছে। কিন্তু বাংলাদেশে নির্বাচনটা অত্যন্ত সুষ্ঠুভাবে হয়েছে। জনপ্রশাসন, সশস্ত্র বাহিনী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করেছে।’

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্রের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভোটার যেন না আসে, নির্বাচনটা যাতে অবাধ না হয়, নির্বাচনই যেন হতে না পারে, সেই চেষ্টা ছিল; যাতে নির্বাচন হওয়ার পরে নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায় যে এই নির্বাচন অবাধ ?ও সুষ্ঠু হয়নি। কাজেই নিষেধাজ্ঞা দাও, ওইটা দাও। আমাদের যখন বলেছিল নিষেধাজ্ঞা দেবে, তখন আমিও বলেছিলাম, দরকার হলে আমরাও নিষেধাজ্ঞা দেব, আমরাও দিতে পারি। আমি নিষেধাজ্ঞার রীতিনীতি জানি বলেই বলেছিলাম।’

শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘এত কথার মধ্যে আমাদের দেশটা যাতে প্রশ্নবিদ্ধ না হয়, সেদিকে লাখ রেখে এবারের নির্বাচন উন্মুক্ত করে দিয়েছি। কারণ, প্রতিপক্ষ থাকুক, নির্বাচনে প্রতিযোগিতা হোক, ভোটার আসবে, নিজেদের পছন্দমতো ভোট দেবে, যাকে খুশি তাকে দেবে, সেই অধিকারটুকু জনগণ পাক। সেইভাবে নির্বাচন করেছি বলেই আজকে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারছে না। অনেকেই বলে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারছে না। এই কথাটা আমাদের নেতাকর্মীদের মাথায় রাখতে হবে, মনে রাখতে হবে।’

নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কারণে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে, সে ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘এবারের নির্বাচন স্বতন্ত্র ও দলীয়ভাবে করতে গিয়ে অনেকের মন-কষাকষি, নানা রকম কিছু হয়ে গেছে। যেটা হয়ে গেছে, সেটা হয়ে গেছে; এখন ভুলে যেতে হবে। সবাই এক হয়ে কাজ করতে হবে। জনগণের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রেখে কাজ করতে হবে। যদি কোথাও কোনো সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে সেটা সমাধানের জন্য আমরা আছি, কেন্দ্রীয় কমিটি করবে। কিন্তু নিজেদের মধ্যে কোনো আত্মঘাতী সংঘাত যেন না হয়; সেদিকে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। দোষারোপ করার অর্থ হয় না।’

জনগণের ভোটে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হবে জেনেই বিএনপি নির্বাচন বানচাল করতে চেয়েছিল বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন,‘সেই সঙ্গে তারা জুগিয়েছিল কিছু প্রভু। তাদের নির্দেশমতো বিএনপি আন্দোলন করে। এখনও কিছু কিছু লম্ফঝম্প করছে, করতে পারে; কিন্তু বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এ দেশের জনগণের সংগঠন, এটা তাদের মনে রাখতে হবে। এটা ভেসে আসেনি কিংবা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী জেনারেল পকেট থেকে এ সংগঠন বের হয়নি। এ সংগঠন মাটি-মানুষের ভেতর থেকে বেড়ে উঠেছে। মানুষই এ সংগঠনের বড় শক্তি।’

দ্রব্যমূল্য কমাতে সবাইকে উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন,‘বিশেষ করে পরিবহনের ক্ষেত্রে বা পাইকারি বাজারে চাঁদাবাজি ও অবৈধ মজুতদারি বন্ধ করতে হবে। আপনারা এখানে আছেন বিভিন্ন এলাকার প্রতিনিধি, এখানে আপনাদের দৃষ্টি দিতে হবে।’ কৃষক যাতে ন্যায্য মূল্য পান, সেটার দিকে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা দেন তিনি।

বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মনে রাখতে হবে,‘যে অর্থ আমরা ব্যয় করি, তার অর্ধেক দামে বিদ্যুৎ দিচ্ছি। কাজেই এখন থেকে যে যত বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করবে, তাকে ততো বেশি দাম দিতে হবে। আমরা সেইভাবে ব্যবস্থা নিচ্ছি। আর যারা একেবারে পারবে না, তাদের জন্য ছাড় আছে। কিন্তু অতিরিক্ত বিদ্যুৎ যারা ব্যয় করবে, তাদের অতিরিক্ত মূল্য দিতে হবে।’

বিরোধী দলের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আগে বিএনপি চুপিসারে আগুন দিত গাড়িতে, রেলে- সব জায়গায়। এবার তারা প্রকাশ্যে দিয়েছে, আবার ছবি তুলেছে। তাদের গুরু লন্ডন থেকে বলে দিয়েছে যে ছবি পাঠাতে হবে। ফলে তারা যে আগুন দিচ্ছে, সেই ছবি আর সাক্ষ্যপ্রমাণটা পাওয়া যাচ্ছে। যে যে এলাকায় এই ঘটনাগুলো ঘটেছে, এগুলো জোগাড় করে…এই মামলাগুলো যেন ঠিকমতো চলে এবং শাস্তিটা যেন পায়। তাদের নেতাই তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করে দিয়েছে। কাকে দোষ দেবে? নেতাকে খুশি করতে ছবি তুলেছে, পাঠিয়েছে। এখন ডিজিটাল সিস্টেমে যেভাবেই পাঠক, সংগ্রহ করা কোনো কঠিন ব্যাপার না। সেভাবে প্রমাণগুলো এসেছে।’

২০০১ সালের নির্বাচনের পর বিএনপির নির্যাতনের মামলা এখনও রয়ে গেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কাজেই মামলাগুলো যাতে যথাযথভাবে হয়, সাক্ষী যেন হয় এবং এই দুষ্কৃতকারীরা যেন যথাযথ শাস্তি পায়। ভবিষ্যতে যেন আর আগুন দেয়া, রাষ্ট্রীয় সম্পদ নষ্ট করার সাহস না পায়, সে ব্যবস্থাটাই আমাদের করতে হবে।’

জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সবাইকে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘দুর্নীতির অর্থ কোনো ভালো কাজে লাগে না; বরং তাদের সন্তানেরাই বিপদে পড়বে। এই বদনাম যেন না হয়, সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। একটা কথা মনে রাখবেন, নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। কেউ জয়ী হয়েছেন, কেউ জয়ী হতে পারেননি। কিন্তু কিছু ভোট তো পেয়েছেন। সেটি মাথায় রেখে জনগণের আস্থা, বিশ্বাস যেন নষ্ট না হয়, সেটি আপনাদের চলনে-বলনে প্রমাণ করতে হবে। আপনারা সেভাবে কাজ করবেন, সেটিই চাই।’

গণভবনে বিশেষ বর্ধিত সভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক মুক্তির ‘উত্তরাধিকার’ হিসেবে আখ্যা দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘শেখ হাসিনা হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক মুক্তির উত্তরাধিকার। বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর গত ৪৮ বছরে তার মত জনপ্রিয় নেতা সৃষ্টি হয়নি। সাহসী রাজনীতিকের নাম শেখ হাসিনা।’ নেতাকর্মীদের মূল্যায়নে শেখ হাসিনার দক্ষতার প্রসঙ্গ তুলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা নির্বাচন করি পাঁচ বছর পরে। শেখ হাসিনা নির্বাচন করেন প্রতিদিন। তিনি যখন কোনো অঞ্চলে যান, সেখান থেকে এক দুইজনের নাম লিখে রাখেন। যখন জাতীয় সংসদ বা সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচন হয়, তখন ওই ডায়েরি থেকে নামগুলো এনে ঠিক করে নেন।’

সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর গত ৪৮ বছরে তার (শেখ হাসিনা) মত জনপ্রিয় নেতা সৃষ্টি হয়নি। গত ৪৮ বছরে দক্ষ প্রশাসকের নাম শেখ হাসিনা। সাহসী রাজনৈতিকের নাম শেখ হাসিনা। তিনি বাংলাদেশের রূপান্তরের রূপকার। যিনি মৃত্যুর মিছিলে দাঁড়িয়ে বারবার বাংলার জয়গান গেয়েছেন।’

শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় গণভবনে এ সভা শুরু হয়। পৌনে ১১টার দিকে সভায় যোগ দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
এজি

এছাড়াও দেখুন

Hc--

৬৬ ডেপুটি এটর্নি জেনারেল ১৬১ সহকারী এটর্নি জেনারেল নিয়োগ

সুপ্রিম কোর্টে রাষ্ট্রপক্ষে দায়িত্ব পালনের জন্য নতুন করে ৬৬ জন ডেপুটি এটর্নি জেনারেল ও ১৬১ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *